ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের নিদর্শন - কিতাবুল ফিতান
ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের নিদর্শন - কিতাবুল ফিতান
হযরত ফুলান ইবনে মাআ'ফেরী হতে বর্ণিত যে, তিনি আবু ফিরাস থেকে শুনেছেন যে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযিয়াল্লাহু আনহু কে বলতে শুনেছেন যে, যখন খোলা প্রান্তর সৈন্য সহকারে ধসে যাবে, আর সেটাই মাহদী আলাইহিস সালামের অবির্ভাবের আলামত বা নিদর্শন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫০]
হযরত আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবেন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সূৰ্য্য নিদর্শন হয়ে উদিত হয় ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫১ ]
হযরত কা'ব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের বের হওয়ার আলামত হল আল উয়াতুন। যেটা পশ্চিম দিক থেকে আসবে। যার উপর কিনদাহ একজন খোড়া ব্যক্তি থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫২]
হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন সুফিয়ানী ও ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম রেসের দুটি ঘোড়ার মত বের হবে। অতপর সুফিয়ানীর সাথে যার সাক্ষাত হবে সে তার উপর বিজয় লাভ করবে। এমনিভাবে ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের সাথে যার সাক্ষাত হবে সে তার উপরও বিজয় লাভ করবে। ফিতর ও আবু জাফর বলেন ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম দুই শত বছর অবস্থান করবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৩ ]
হযরত যুহরী থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন দ্বিতীয় সুফইয়ানীর জন্মের সময় আকাশে আলামত বা নিদর্শন দেখা যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৪]
হযরত আবু সাদেক হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না সুফইয়ানী তার কাষ্ঠের(ক্ষমতার মসনদ) উপর না দাড়ায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৫ ]
হযরত আবু জাফর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন অন্ধকার না বাড়া(ঘনীভূত না হওয়া )পর্যন্ত সুফিয়ানী বের হবে না ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৬]
হযরত মাতারিল ওররাক হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মানুষ প্রকাশ্যে আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে কুফুরী করার পরই ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৭ ]
হযরত ইবনু সিরীন হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৮ ]
[ নোট: এমনটি হয়তো এখনো দেখা যায়নি, হতে পারে অচিরেই তা দেখার সময় চলে আসবে। তবে অন্য হাদিসের উপর দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এটা হবে কোনো যুদ্ধের ময়দানে । যেমনটি বর্ণিত হয়েছে, ফুরাতের স্বর্ণের পাহাড় উঠলে তা দখল করতে যারা যাবে তাদের ব্যাপারে। এটিও হয়তো সে ব্যাপারেই। আর তারপরেই হয়তো ইমাম মাহদি বেরিয়ে আসবে। ]
হযরত কাইসান আর রুওয়াসিয়্যী কাসসার থেকে বর্ণিত -আর তিনি গ্রহণযোগ্য রাবী ছিলেন, তিনি বলেন আমার মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) আমার নিকট বর্ণনা করে বলেন যে, আমি আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু কে বলতে শুনেছি যে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদি বের হবে না , যতক্ষণ পর্যন্ত না তিন ভাগের এক ভাগকে হত্যা করা হয়। তিন ভাগের এক ভাগ লোক মারা যায় এবং তিন ভাগের এক ভাগ জীবিত থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫৯ ]
হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা একে অপরের চেহারায় থুথ নিক্ষেপ কর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬০]
[ নোট: এ বিষয়টি থেকে যেমন যুদ্ধ বিগ্রহ উদ্দেশ্য হতে পারে। তেমনি হতে পারে নৈতিকতার অবক্ষয়। মানুষের একজনের প্রতি অপরজনের কোনো শ্রদ্ধাবোধ থাকবে না। সবাই সবাইকে রাজা মনে করবে আর অপরকে অপমান করবে। আর এ বিষয়টি বর্তমানেও হয়ে চলছে বলা যায়। আজ কোনো একটি অন্যায় দেখে কোনো গুরুজন পর্যন্ত একটি বাধা দিলে, কিছু বললে, তাকে এমন হেনস্তার শিকার হচ্ছে যে, সবাই এখন নিজের মত করে পথ করে চলে যায়, চোখের সামনে একটি অন্যায় অবিচার হতে দেখেও মুখ খুলতে চায় না। ]
হযরত আবু ফারেস হতে বর্ণিত যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছেন যে, মাহদী আলাইহিস সালামের অবির্ভাবের আলামত বা নিদর্শন হল যখন খোলা প্রান্তর সৈন্য সহকাররে ধসে যাবে। আর সেটাই হল মাহদী আলাইহিস সালামের বের হওয়ার আলামত ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬১ ]
হযরত আবু কুবাইল রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন একশত চার বছর মাহদী আলাইহিস সালামের উপর মানুষ ভিড় করবে। ইবনে লাহইয়া বলেন উক্ত হিসাবটা আজমী তথা অনারবী হিসাব মতে। আরবী হিসাব মতে নয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৬২ ]
হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন মাহদী আলাইহিস সালামের অবির্ভাবের আলামত হল- যখন তুর্কি জাতি তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে। আর তোমাদের ঐ খলীফা মারা যাবে যে মাল সম্পদ জমা করেছিল। আর তার পরে দূর্বল একজন শাসক তার স্থলাভিষিক্ত হবে। দুই বছর পর তার বাইয়াত নষ্ট হয়ে যাবে। দামেস্কের মসজিদের পূর্ব দিকের দুটি দেয়াল ধসে যাবে। সিরিয়া হতে তিনটি দলের বহিপ্রকাশ হবে। পূর্ব দিকের অধিবাসীদের মিসরের দিকে যাবে। আর সেটা সুফইয়ানীর আমারত বা নিদর্শন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৩ ]
হযরত আবু মুহাম্মাদ পূর্বাঞ্চলের জনৈক অধিবাসী হতে বর্ণনা করে বলেন যে, ততক্ষণ পর্যন্ত মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এক ব্যক্তি সুন্দরী লাস্যময়ী এক বাঁদী নিয়ে বের হবে। অতপর সে বলবে এমন কে আছে যে ইহাকে তার সমপরিমান ওযনের খাদ্য দিয়ে একে ক্রয় করবে। অতপরই মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৪]
হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যখন আকাশ হতে এক সম্বোধনকারী সম্বোধন করে বলবে যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিবারে সত্যতা। আর সে সময়ই মাহদী আলাইহিস সালাম মানুষের সম্মুখে বের হবে। এবং মানুষ তার ভালবাসা (এর শরবত পান করবে। তাদের নিকট তার আলোচনা ব্যাতীত আর কোন আলোচনা থাকবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৫ ]
হযরত উমর ইবনে আলী হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ হবে। অতপর আমার পরিবারের হতে এক ব্যক্তির উপর মানুষ জমায়েত হবে। যার কোন আল্লাহ তা'আলার নিকট কোন অংশ থাকবে না। অতপর তাকে হত্যা করা হবে। অথবা সে মারা যাবে। অতপর মাহদী আলাইহিস সালাম দাড়াবেন। (বের হবে।)
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ- ৯৬৬ ]
হযরত ইবনে শওযাব তার কতিপয় সাথী থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, ততক্ষণ পর্যন্ত মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না কাইল অথবা ইবনে কাইল কেউ অবশিষ্ট থাকবে না বরং সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর কাইল হল নেতা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৭ ]
[ নোট: উদ্দেশ্য হচ্ছে, পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেওয়ার মত কেউ থাকবে না। তারা নিঃশেষ হয়ে যাবে বা তাদেরকে মেরে ফেলা হব ে। অথবা পৃথিবীকে পুরুষশূণ্য করা হবে। বর্তমানেও কুফরি বিশ্ব এমন পলিসি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ]
হযরত আবু কুবাইল রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন বনী হাশেমের এক ব্যক্তি বাদশা হবে। অতপর সে বনী উমাইয়াকে হত্যা করবে। এমনকি তাদের মাঝে দূর্বল ব্যতীত কেউ জীবিত থাকবে না। তাদের ব্যতীত অন্য কাউকে সে হত্যা করবে না। অতপর বনী উমাইয়া হতে এক ব্যক্তি বের হবে। সে প্রত্যেক এক ব্যক্তির পরিবর্তে দুই জনকে হত্যা করবে। এমনকি বনী হাশেমের মহিলা ব্যতীত কেউ জীবিত থাকবে না। অতপর মাহদী আলাইহিস সালাম বের হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৮ ]
হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড় থেকে ফুরাত (নদী) কে খুলে দেওয়া হবে। অতপর সেখানে প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে। যদি তোমরা উক্ত ঘটনা পাও, তাহলে তোমরা উহার নিকটবর্তী হইও না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬৯ ]
[ নোটঃ সম্পদ সব সময়ই মানুষের জন্য ফিতনা হয়ে এ সেছে। যা রাসুল তার হাদিসেও বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিতনা রয়েছে আর আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে সম্পদ। এ সম্পদ বা স্বর্ণ-রূপা এসবকে কেন্দ্র করে বর্তমান দুনিয়াতে হরহামেশাই হত্যাকাণ্ড হয়ে চলছে। আর ফুরাতে যে স্বর্ণের পাহাড় দেখা দেবে, তা নিয়েও যে দ্বন্দ্ব হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে পাহাড় মানুষের জন্য ফিতনা হয়েই আসবে, নিয়ামত নয়। ]
হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন চতুর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ বার মাস স্থায়ী হবে। যখন অবসান হবে তখন অবসান হবে। (অবসানের সময়ে অবসান হবে।) আর তার পরেই ফিরাত নদী সর্ণের পাহার উন্মুক্ত করে দিবে। অতপর তার উপর প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৭০ ]
হযরত কা'ব রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন ফুরাত নদির কিনারা সিরিয়ার কিনারায় অথবা তার একটু পরে হবে। সেখানে অনেক ভীড় হবে। অতপর সেখানে তারা মাল সম্পদের উপর যুদ্ধ করবে। অতপর সেখানে প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে। আর সেটা ঘটবে রমজান মাসে হাদ্দা ও ওয়াহিদার (শব্দ ও জীর্ণ এর) পর। এবং তিনটি ঝান্ডাবাহী দলের পৃথকীর পর। যারা প্রত্যেকেই নিজের জন্য ক্ষমতা চাইবে। তাদের মধ্যে একজন ব্যক্তি থাকবে যার নাম হবে আব্দুল্লাহ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৯৭১]
হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন চতুর্থ ফিতনা বা যুদ্ধ আঠারো মাস দীর্ঘস্থায়ী হবে। অতপর যখন অবসান ঘটবে তখন অবসান ঘটবে। (অবসানের সময়ে অবসান ঘটবে।) আর ফুরাত নদীকে স্বর্ণের পাহাড় হতে খুলে দেওয়া হবে। আর উম্মত বা জাতি উহার উপর ঝুঁকে পড়বে। অতপর প্রত্যেক নয় জনের সাত জনকে হত্যা করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৭২ ]
Comments 0