মানুষের মধ্যে বালা মসিবত অধিকহারে দেখা গেলে মৃত্যু কামনা করার ব্যাপারে
মানুষের মধ্যে বালা মসিবত অধিকহারে দেখা গেলে মৃত্যু কামনা করার ব্যাপারে
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো মানুষ অন্যের কবরের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করার সময় বালা-মসিবত ও ফিতনার কারণে এ আশা করবেনা যে, হায়! আমি যদি এ কবরের বাসিন্দা হতাম!
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৪১ |
হযরত আব্দুল্লাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এমন এক যুগ আসবে, মানুষ কারো কবরে এসে সেখানে শুয়ে পড়বে এবং বলতে থাকবে, হায়! আমি যদি এ কবরের একজন সদস্য হতাম! এটা অবশ্যই আল্লাহ তাআলার সাথে অগ্রীম সাক্ষাতের আশায় নয়, বরং সেটা হবে মারাত্মক মারাত্মক বালা-মসিবদ দেখার কারণে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৩] -
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতদিন না কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে। অতঃপর বলতে থাকবে হায়! আফসুস যদি আমি তোমার জায়গায় হতাম, (তাহলে কতইনা ভাল হত)।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৪]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মানুষের উপর এমন যমানা আসবে যে, তখন তাতে তাদের কারো কাছে উত্তপ্ত গরমের দিনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার চেয়ে মৃত্যু বরণ করা বেশি পছন্দ করবে, অতঃপর সে মৃত্যুবরণ করবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৪৫়]
হযরত আবতাত ইবনে মুনজির, আবু আশুরা আলহাজরামী থেকে বর্ণন করেন, তিনি বলেন, যদি তোমাদের হায়াত দীর্ঘ হয়, তাহলে তোমাদের হয়তো তার ভাইয়ের কবরে এসে তার থেকে উপকৃত হতে চেষ্টা করবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি তোমার স্থলে হতাম তাহলে অবশ্যই মুক্তি পেয়ে যেতাম।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আৰু আয়বাহ! গোত্রে নতুন কোনো সন্তান জন্মলাভ করলে তাকেও কি ঐ ফিতনা গ্রাস করে নিবে। জবাবে তিনি বললেন, এক প্রান্ত হতে তোমাদেরকে দুশমন হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকবে। এহেন পরিস্থিতিতে অন্য প্রান্ত হতে দুশমনের আরেকদল হামলা করে বসবে। তখন তোমাদের হুশ থাকবেনা যে, কোন দুশমন থেকে পলায়ন করবে। তখনই মূলতঃ উল্লিখিত সূরত প্রকাশ পাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৪৯ ]
আবু আযবা হাজরামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি তোমাদের সামান্য একটু হায়াত বৃদ্ধি পায় তাহলে হয়তো এমন অবস্থা হবে, তোমাদের কেউ তার বন্ধুর কবরে এসে উক্ত কবরবাসীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বলবে, হায়! আমি যদি তোমার স্থলে হতাম তাহলে নিঃসন্দেহে মুক্তি পেয়ে যেতাম ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫০]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর সমুদ্র এত বেশি কঠিন হবে, যার কারণে তার উপর কোনো জাহাজ চলতে পারবেনা এবং তেমনিভাবে স্থলভাগও এমন কঠিন হয়ে উঠবে ফলে কেউ তার উপর দিয়ে অতিক্রম করে নিজের ঘর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫১ ]
হযরত আবদল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আমরাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের মাঝে এমন এক যুগ আসবে, সম্মানী, সম্পদশালী ও পরিবার-পরিজন ওয়ালা লোক পর্যন্ত মৃত্যু কামনা করবে যেহেতু তারা তাদের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে নানান ধরনের বালা-মসিবদের সম্মুখিন হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫৩]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মু'তাজ ইবনে জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা এ পৃথিবীতে শুধুমাত্র ফিতনা ও বালা-মসিবতই দেখতে পাবে। যেকোনো বিষয় ধীরে ধীরে কঠিন হতে থাকবে। নেতৃত্বাস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কঠোরতাই দেখতে পাবে। এমন বিষয় দেখবে যা তোমাদেরকে ভীতিকর করে তুলবে। কিন্তু তার পরবর্তী ধাপ এর থেকে আরো কঠিন ও ভয়াবহ হয়ে উঠবে
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫৪]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন সময় আসন্ন হবে যে, ওলামাগনের নিকট লাল বর্ণের স্বর্ণের চেয়েও মৃত্যু বেশী পছন্দনীয় হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫৫ ]
হযরত উমায়র ইবনে ইসহাক বলেন, আমরা আলোচনা করতে ছিলাম যে, মানুষের থেকে সর্ব প্রথম ভালোবাসা (বন্ধুতা) উঠে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫৬ ]
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ থেকে ফিতনার আলোচনা শুনেছি। অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ তা কখন হবে? রাসূল সাঃ বললেন, যখন কোন ব্যক্তি তার বন্ধু থেকে নিরাপদ পাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫৭ ]
হযরত হামাম ইবনে ওতাইবা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এমন এক যুগ আসবে যদ্বারা কোনো বিজ্ঞলোকে চক্ষু শীতল হবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৫৮ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত যোয়ায ইবনে জাবাল রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা দেখবে বিনা অপরাধে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, মিথ্যার কারণে মানুষকে টাকা-পয়সা দেয়া হচ্ছে, আর মানুষের মধ্যে নাস্তিক মুরতাদ হওয়া, সন্দেহ করা ও অভিশাপ দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে তখন তোমাদের মধ্যে যারা মারা যেতে চাও তারা যেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৫৯]
হযরত যায়েদ ইবনে ওয়াহাব রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ রাযি কে বলতে শুনেছেন, নিঃসন্দেহে ফিতনা ধীরে ধীরে একের পর এক আসতে থাকবে। উক্ত ফিতনার সময় যারা মারা যেতে চায় তারা যেন মৃত্যু গ্রহণ করে নেয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৬১]
হযরত যায়েদ ইববে ওয়াহাব বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন: ফিতনার স্থিতিশীলতা হচ্ছে, যখন তরবারিকে খাপবদ্ধ করা হয় আর ফিতনার তীব্রতা হচ্ছে, যখন তরবারিকে খাপমুক্ত করে নাঁঙ্গা করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৬২ ]
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযি বলেন, হে আবুততোফাইল! তোমার কি অবস্থা হবে, যখন আমাদের উপর বিভিন্ন ধরণের ফিতনা আসতে থাকবে। তখন সর্বোত্তম মানুষ হবে প্রত্যেক ধনী লোক যারা তাদের ধনাঢ্যতা গোপন রাখবে। অতঃপর আবুৎ তোফাইল রহঃ বলেন, তখন কি অবস্থা হবে, নিশ্চয় সেটা আমাদের প্রতি এমন দার করা যদ্বারা মানুষ নিম্নস্তরে পতিত হবে এবং নিক্ষিপ্ত হবে অনেক গভীরে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৬৬ ]
হযরত নোমান ইবনে মোকাররিনি রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ যা, এরশাদ করেছেন, ফিতনা এবং যুদ্ধবিগ্রহকালীন যারা এবাদতের ওপর অটল থাকবে তারা আমার প্রতি হিজরত করার প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৬৭]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার কাছে অতি পছন্দনীয় বস্তু হচ্ছে 'আল গুরাবা'। অর্থাৎ গরীব-মিসকীনগণ। তার কাছে গুরাবা কারা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বললেন, যারা তাদের দ্বীনসহকারে এদিক সেদিক পলায়ন ও আত্মগোপন করতে থাকবে, এক পর্যায়ে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়ম আঃ এর সাথে মিলিত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১৬৮ ]
Comments 0