নিম্ন শ্রেনীর লোকজনের জয়লাভ করা প্রসঙ্গে-কিতাবুল-ফিতান
নিম্ন শ্রেনীর লোকজনের জয়লাভ করা প্রসঙ্গে-কিতাবুল-ফিতান
বকর ইবনে সাওয়াদা রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা খাসআম গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা কি কিছু স্বপ্নে দেখেছ? উত্তরে ', তাঁরা না করলে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, দেখলে অবশ্যই আমাকে জানাবে।
এক পর্যায়ে তারা বলল, স্বপ্নে আমরা এমন একটি গাধা দেখতে পেয়েছি যার চার পা উপরের দিকে হয়ে আছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ তাদেরকে এর ব্যাখ্যা সম্বন্ধে জিঙ্গাসা করলে তারা বলল, আমরা চিন্তা করেছি এর ব্যাখ্যা এভাবে হতে পারে যে, নিম্ন ও নিকৃষ্টতম শ্রেনীর লোকজন জয়লাভ করবে এবং সম্মানিত লোকজন পরাজিত হবে। তাদের ব্যাখ্যার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, হ্যাঁ উক্ত স্বপ্নের ব্যাখ্যা তোমাদের ব্যাখ্যার ন্যায়।
[ আল ফিতান নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৭৮ ]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, শাম দেশে ফিতনা এত বেশি, তীব্র আকার ধারন করবে যাদ্বারা সমাজের সম্মানী লোকজন প্রথমে বিজয়ী হবে। অবশ্যই সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য থাকবে। অতঃপর নিম্ন শ্রেনীর লোকজন জয়লাভ করতে থাকবে। যাদের জ্ঞান বুদ্ধি হবে খুবই কম। তারা সম্মানী লোকদেরকে কৃতদাস বানিয়ে রাখবে যেমন পূর্ববর্তী যুগের লোকজন গোলাম বানিয়ে রাখতো ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৭৯ ]
আবু জাহিরিয়্যাহ রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, তোমাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন তোমাদের গ্রামবাসীদের লোকজন তোমাদের ভিতরে প্রবেশ করে তোমদের ধন সম্পদের মধ্যে শরীক হয়ে যাবে এবং তোমাদের কেউ তাদেরকে বাধা দিতে পারবেনা। যার কারনে কেউ বলে থাকে “যত বেশি সময় তোমরা সম্পদশালী ছিলে, আমরা তত বেশি সময় পর্যন্ত দুর্ভাগ্যতে ছিলাম ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৮১]
ইয়া ইবনে জাবের রহঃ বলেন, তোমাদের গ্রামবাসীরা তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তোমাদের মাঝে কল্যান বাকি থাকবে। তাছাড়া কল্যান তোমাদের সাথে থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত বহন করার মত পিঠ তোমাদের সাথে থাকবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৮২]
জাহরিয়্যাহ রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, তোমাদের জিম্মিদের মাঝে এমন কোনো গোত্র জন্ম লাভ করবেনা যারা বালা মুসিবতের দিক দিয়ে মাশরিক বাসীদের থেকে কঠোর হবে। যারা লবন এবং পানি বিশিষ্ট হবে। নিঃসন্দেহে তাদের মহিলাদের থেকে কোনো মহিলা তার আঙ্গুল দ্বারা অন্য মুসলিম মহিলার পেটে আঘাত করে গালিসুলভ বলবে হ্যাঁ আমাদেরকে টেক্স বা কর দাও ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৮৩ ]
আব্দল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, কল্যান তোমাদের সাথে থাকবে, যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদেরর গ্রাম বাসিরা শহরবাসীদের থেকে অমুখাপেক্ষি থাকবে। যদি তারা তোমাদের কাছে আসে তাহলে তোমরা তাদেরকে নিষেধ করোনা। যেহেতু তোমাদের কাছে সম্পদের ছড়াছড়ি থাকবে। তারা বলবে, দীর্ঘদিন থেকে আমরা ক্ষুধার্ত, অথচ তোমরা তৃপ্ত সহকারে খেয়ে যাচ্ছ এবং দীর্ঘদিন হতে আমরা কষ্ট শিকার করে যাচ্ছি অথচ তোমরা সাচ্ছন্দবোধ করে যাচ্ছ। সুতরাং, আজ তোমরা আমাদের প্রতি সহানুভুতি দেখাও।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৮৫]
হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে অন্যথায় আল্লাহ তা'আলা তোমাদের বিরুদ্ধে অনারব থেকে এমন এক দুশমন পাঠাবেন, যারা তোমাদের ঘাড়ের উপর আক্রমন করবে এবং তোমাদের যাবতীয় সম্পদ ভক্ষন করে নিয়ে যাবে। অন্যথায় তোমরা দৃঢ় পদক্ষেপকারী সিংহের আকার ধারন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৮৬ ]
ইবনুল আসআছ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এমন কিছু বিষয় প্রকাশ পাবে যা দ্বারা বুঝা যাবে যে, নির্বোধ ও বোকা টাইপের লোকও বিচক্ষন লোকের জন্য পথপ্রদর্শনকারী হবে। এবং বেকুব লোক ও ঞ্জানী লোককে পথ দেখাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৮৮ ]
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বলেন, নিঃসন্দেহে প্রত্যেক মাখলুকই দৌলতপ্রাপ্ত হবে। সম্পদশালীরা অভাবীর উপর বেশি প্রাধান্য পাবে। অতঃপর শেষ যামানায় মানুষের মধ্যে যারা বেকুব ও অভাবী তারা পথপ্রদর্শনকারী সাব্যস্ত হবে। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে, সম্মানিত কারা?
সময় ও পরিবর্তন এভাবে চলতে থাকবে, হঠাৎ করে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। অতঃপর কিয়ামত অতি নিকটে ও দ্বার প্রান্তে এসে উপনীত হবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬৮৯ ]
আমর ইবনে কাইস রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযিঃ কে বলতে শুনেছেন, নিঃসন্দেহে কিয়ামতের আলামত হচ্ছে, দেশের প্রতাপশালীরাই একমাত্র পৃথিবীতে থাকবে, অন্য ভালো ও নেককারদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে। এবং মুনাফেকদেরকেই প্রত্যেক গোত্রের সরদার বানানো হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯১ ]
হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, কিয়ামত সংঘঠিত হবেনা, যতক্ষন পর্যন্ত সমাজের যাবতীয় দায়িত্ব এমন লোকের হাতে ন্যস্ত করা হবেনা, কিয়ামতে দিন যার একটি যব পরিমান মূল্যও থাকবেনা ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯২ ]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি থেকে বর্নিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ননা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, তোমাদের কি অবস্থা হবে, যখন তোমাদের মাঝে এমন যুগ আসবে, যা মানুষকে চালনির ন্যায় চালতে থাকবে, যাদ্বারা মানুষ নানান ধরনের মুসিবতের সম্মুখিন হয়ে ধ্বংস হতে থাকবে এবং নিকৃষ্টতম মানুষই একমাত্র ভালো থাকবে।
এমন অবস্থা দেখা দিতে থাকলে তোমরা সৎকাজকে আকড়িয়ে ধর এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাক। বিশেষ মানুষের প্রতি ধাবিত হও এবং সর্ব সাধরন থেকে দুরে সরে থাকো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯৩ ]
সাফওয়ান ইবনে আমর রহঃ আব্দুল্লাহ ইবনে কাইস থেকে শুনে বর্ননা করেন, তিনি এরশাদ করেন, তোমাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন এমন একযুগ আসবে, বিশজন কিংবা তার থেকে অধিক লোক দেখা গেলেও তাদের মধ্যে আল্লাহকে ভয় করে এমন কাউকে পাওয়া যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯৪ ]
উকবা ইবনে আমের রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আমি আমার উম্মতের ক্ষেত্রে দুধের ব্যাপারে মদ থেকেও বেশি আশংকা করছি। একথা শুনে সাহাবায়েকেরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাঃ এটা কীভাবে হতে পারে? জবাবে রাসূকুল্লাহ সাঃ বলেন, তারা দুধকে এত বেশি পছন্দ করবে, যার কারনে জামাআত থেকে অনেক দুরে সরে যাবে এবং ধীরে ধীরে জামাআত ত্যাগ করতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯৫ ]
কাসীর ইবনে মুররা রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে, অযোগ্য লোক এ পৃথিবিতে আধিপত্য বিস্তার করবে এবং নিকৃষ্টতম লোকদেরকে সম্মানিত করবে ও সম্মানিদেরকে অপদস্ত করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯৬ ]
কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন যখন তুমি কুরাইশের আচরনে আরববাসীকে লজ্জিত হতে দেখবে, অতঃপর সমাজের বিত্তবানদেরকে লজ্জিত হতে দেখবে আরববাসীদের কারনে, এবং পৃথিবীর মুসলমানদেরকে অপমান হতে দেখবে সমাজের বিত্তবানদের কারনে তাহলে বুঝতে হবে তোমাকে কিয়ামতের যাবতীয় আলামত গ্রাস করে নিয়েছে।
উক্ত হাদীসে বর্ননাকারী কুরাইব রহঃ বলেন, আমি আবুইসহাককে বললাম হযরত হোজাইফ ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ তো আমাদেরকে আহমারাইন সম্বন্ধে বলেছেন, সেটা কি জিনিস। জবাবে তিনি বললেন, সেটা তখনই হবে যখন কলমের সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে এবং কেউ আর সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাকারী থাকবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬৯৭ ]
প্রথম খন্ড সমাপ্ত
Comments 0