রাসুল (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর পৃথিবিতে যা ঘটবে
রাসুল (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর পৃথিবিতে যা ঘটবে
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসূল সাঃ আমাদের নিয়ে একটু বেলা থাকতেই আসরের নামায আদায় করেন। অতঃপর সূর্যাস্তের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত ভষণ দিলেন। উত্ত ভাষণে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তার সমস্ত কিছুই বর্ণনা করেন। তাঁর সেই ভষণটি যার মনে রাখার সে মনে রেখেছে যার ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গিয়েছে।
[ আল ফিতান: - ১]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার সম্মুখে দুনিয়াকে উঁচু করে ধরলেন। অতঃপর দুনিয়াকে এবং তাতে কিয়ামত পর্যন্ত ঘটিতব্য বিবয়গুলো দেখছিলাম যেন আমার দুই হাতের তালুগুলো দেখছি এটা হলো আল্লাহু তায়ালার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিষয়, যা তিনি প্রকাশ করেছিলেন তার পুর্ববর্তি নবীগনকে।
[ আল ফিতান: - 2]
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, কিয়ামত পযপ্ত সংঘটিতব্য সমস্ত ফিতনা সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশী অবগত, রাসূল সাঃ আমার নিকট সেই ফিতনা সম্পর্কে অনেক গোপন বিষয় আলোচনা করেছেন যা আমাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে বর্ণনা করেনি। কিন্ত একদিন রাসূল সাঃ এক মজলিসে আগমণ করলেন । এরপর ছোট বড় বহু ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। উল্লেখ্য এ মজলিসে যারা উপস্থিত ছিল আমি ছাড়া প্রত্যেকেই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।
[ আল ফিতান: - ৩]
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ঘোর অন্ধকার রাত্রির টুকরোর মত ফিতনা একের পর এক আসতেই থাকবে ৷ তা তোমাদের কাছে গরুর চেহারার ন্যায় একই রকম মনে হবে৷ লোকেরা জানবেনা যে কোন টা কি কারণে হচ্ছে।
[ আল ফিতান: - ৪]
হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এই ফিতনা গরুর ললাটের ন্যায় । তাতে বহু মানুষ ধ্বংশ হবে। তবে যারা পূর্বেই এ সম্পর্কে অবগতি লাভ করবে তারা ধ্বংশ হবে না।
নোটঃ অথচ আমরা ফিতনা সম্পর্কিত বিষয় সম্মপর্কে যানতে চাইনা। উলটা এই ভয়ে থাকি যে, যদি তা জানার দ্বারা দায়িত্ব ঘারে এসে পরে
[ আল ফিতান: - ৫]
কুঁযে ইবনে আন্কামা খুযায়ী থেকে বণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এক লোক জানতে চাইল ইসলামের কি কোনো শেষ রয়েছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন হ্যাঁ, আরব বা অনারব যে কোনো এলাকার কারো ঘরের সদস্যদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কল্যাণ কামনা করলে তাদেরকে তিনি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করেন।
জিজ্ঞাসা করা হল, এরপর কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এরপর পাহাড় তুল্য ফিৎনা প্রকাশ পাবে । অতঃপর এঁ লোক বলল, আল্লাহর কসম! ইনশাআল্লাহ! ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কখনো হতে পারেনা । রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, কসম সে সত্ত্বার যার হাতে আমার রূহ, অবশ্যই হবে। এরপর উক্ত ফিৎনা চলাকালীন তোমরা আশ্রয় নিবে ফনাতুলা কালো বিষাক্ত সাপের (অর্থাৎ যারা কিনা সকল নাটের গুরু তাদের কাছেই সবাই আস্রয় পার্থনা করবে) ৷ যেখানে তোমরা একে অপরের সাথে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত হবে । বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ বলেন, কালো বিষাক্ত যখন কাউকে দংশন করে তখন দংশিত স্থানে মুখের লালা জাতীয় কিছু বিষ লাগিয়ে দেয়ার পর মাথা উঠিয়ে লেজের উপর দাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।
[ আল ফিতান: - ৭]
হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত আসার পূর্বে 'হারজ' সংঘটিত হবে৷ লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো হারজ কী? তিনি বললেন হত্যা এবং মিথ্যা। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহর রাসূল! এখন কাফেররা যে ভাবে নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বেশী হত্যা সংঘটিত হবে? রাসূল সাঃ বললেন তোমাদের মাধ্যমে কাফেররা নিহত হবেনা বরং মানুষ তার প্রতিবেশী, আপন ভাই ও চাচাতো ভাইকে হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: - ১০]
হযরত উসাইদ ইবনে মুতাশাসি ইবনে মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, আমি আবু মুসা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত আসার পূর্বে মুসলমানদের মধ্য হতে ফিতনা ও হত্যা সংঘটিত হবে । এমনকি মানুষ তার দাদা,চাচাতো ভাই, পিতা ও আপন ভাইকে হত্যা করবে আল্লাহর শপথ! আমি আশংকা করছি যে, না জানি আমি এবং তোমরা তাতে জড়িত হয়ে যাই ।
[ আল ফিতান: - ১১]
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর রহস্য সম্বন্ধে অবগত সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ এরশাদ করেন, ফিৎনার সাথে সংশ্লিষ্ট লোক থেকে প্রায় তিনশতজন পযন্ত এমন রয়েছে, আমি ইচ্ছা করলে তাদের নাম, তাদের পিতা এবং গ্রামের নাম পযন্ত বলতে পারবো। যারা কিয়ামত পযন্ত। তার সবকিছুই রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে জানিয়ে গিয়েছেন।
উপস্থিত লোকজন জিজ্ঞাসা করলো, সরাসরি কি তাদেরকে দেখানো হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের আকৃতি দেখানো হয়েছে। যাদেরকে ওলামায়ে কেরাম এবং ফুকাহায়ে এজাম চিনতে পারবেন । হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাষিঃ বলেন, তোমরা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে কল্যাণ সম্বন্ধে জানতে চাও, কিন্তু আমি জানতে চেষ্টা করি অকল্যাণ বা খারাপী সম্বন্ধে আর তোমরা তাঁর কাছে জানতে চাও ঘটে যাওয়া বিষয় সম্বন্ধে, আমি জানতে চাই ভবিষ্যতে যা হবে সে সম্বন্ধে ।
[ আল ফিতান: - ১৬]
হযরত হুজাইফা রাযিঃ এরশাদ করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, আমার ওম্মতের মধ্যে এমন তিনশত লোক প্রকাশ পাবে যাদের সাথে তিনশত পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে । বংশীয়ভাবে এরা খুবই পরিচিত হবে । তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা প্রকাশ করলেও যুদ্ধ করবে সুন্নাতের বিপরীত পথভ্রষ্টার উপর ।
[ আল ফিতান: - ১৭]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযিঃ হতে বণিত, তিনি বলেন, তোমাদের ওপর ফিৎনা-ফাসাদ, অব্যাহত থাকবে এবং মোয়ামালা ধীরে ধীরে আরো কঠিন আকার ধারন করবে । যখন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে দেশ পরিচালনা করে না এবং রাষ্ট্রনায়কগণ আল্লাহ তাআলার এবাদত করেনা তখন তোমরা আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হওয়াকে খুবই ভয় কর । কেননা, আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হওয়া মানুষের অসন্তুষ্ট হওয়া থেকে মারাত্মক ।
[ আল ফিতান: - ১৯]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল”আস থেকে বণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন ফিতনা আসবে যে, তাতে মানুষ তার পিতা ও ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে । এমনকি মানুষ তার বিপদের ব্যাপারে অপমান বোধ করবে, যেমন ব্যভিচারীনি মহিলা তার ব্যভিচারের অপমান বোধ করে।
[ আল ফিতান: - ২৩]
হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (সাঃ) একটি দুর্গের উপর আরোহন করে (লোকদেরকে) বললেন, আমি যা দেখছি তোমরাও কি তা দেখছ? নিশ্চয় আমি দেখছি যে, তোমাদের গৃহের ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টির ন্যায় ফিতনা পতিত হচ্ছে।
[ আল ফিতান: - ২৫], [সহিহ মুসলিমঃ ২৮৮৫]
-এর-ইন্তিকাল-হতে-কিয়ামত-পর্যন্ত-সঘটিতব্য-ফিতনা.jpeg)
Comments 0