ফিতনাকালীন সময়ে মানুষ কান্ডজ্ঞানহীন হওয়া প্রসঙ্গে
ফিতনাকালীন সময়ে মানুষ কান্ডজ্ঞানহীন হওয়া প্রসঙ্গে
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনু ইয়ামান রাযিঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লহ সাঃ এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে, যদ্বারা মানুষের জ্ঞান লোপ পাওয়ার উপক্রম হবে। এমনকি তখন অনেক তালাশ করেও কোনো জ্ঞানী লোক পাওয়া যাবেনা। এরপর রাসূলুল্লাহ সাঃ তৃতীয় প্রকার ফিতনার কথা উল্লেখ করেছেন ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০৭]
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ফিতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, তখন সেই অন্তর তাকে প্রথমবার স্থান দেয়না তাতে একটি সাদা দাগ লিখা হয় । আর যে অন্তর প্রথমবার তাকে স্থান দেয়, তখন তাতে একটি কালো দাগ লিখা হয়। অতঃপর আবার ফিতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, যদি তাকে স্থান না দেয়, যেমন প্রথমবারে দেয়নি, তখন তাতে একটি সাদা পড়ে। আর যদি তাকে স্থান দেয় যেমন প্রথমবারে দিয়েছিল, তখন তাতে একটি কালো দাগ পড়ে।
অতঃপর পুনরায় ফিতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে, যদি তাকে স্থান না দেয়, যেমন আগের দুইবার দেয়নি, তখন তাতে আরো বেশী সাদা ও বেশী স্বচ্ছ দাগ পড়ে। ফলে কখনো ফিতনা তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আর যদি তাকে স্থান দেয় যেমন প্রথম দুই বার দিয়েছিল, তখন তাতে একটি কালো দাগ পড়ে বরং পুরো অন্তর একেবারে বেশী কয়লার মত কালো হয়ে যায়। অতঃপর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে। ফলে তা ভালকে ভাল জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১০ ]
আবু মা'লাবা খুশনী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের আলামত সমূহ থেকে কিছু আলামত হচ্ছে, মানুষের জ্ঞান হ্রাস পাবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং মানুষের মধ্যে পেরেশানী বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১২]
হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় আমার পরে আমার উম্মতকে ফিতনা সমূহ এমনভাবে ছেয়ে ফেলবে যে, তাতে মানুষের অন্তর মরে যাবে, যেমন তার দেহ মরে যায় ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৩ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ কিয়ামতের পূর্বে বিশেষ কিছু হত্যার কথা আলোচনা করেছেন, এমনকি মানুষ তার প্রতিবেশি, ভাই এবং চাচাতো ভাইকেও হত্যা করবে। এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, সেদিন কি আমাদের সাথে আমাদের জ্ঞান থাকবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, সে যুগের অধিকাংশ লোকের জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। মানুষের মধ্যে নির্বোধ ও বোকারাই বাকি থাকবে। তারা নিজেদেরকে খুবই তুচ্ছ মনে করবে, আসলেই তারা অত্যন্ত তুচ্ছ হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১১৫ ]
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, কেউ তাকে একদিন জিজ্ঞাস করে যে, কোন ধরনের ফিৎনা সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ? জবাবে তিনি বললেন, যখন তোমার অন্তরে কল্যাণ- অকল্যাণ উভয়টি পেশ করা হবে, আর তুমি কোনটি গ্রহণ করবে তা নিয়ে দ্বিধাদন্ধে পতিত হবে। [ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ১১৯]
আবু আম্মার হযরত হোজাইফা রাযিঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তিনি বলেন, মানুষের মাঝে এমন একযুগ আসবে, সকালে মানুষ বিচক্ষণ থাকবে, সন্ধ্যা হতে হতে সে পরিপূর্ণরূপে বোকা হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২০]
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঘোর অন্ধকার রাত্রির টুকরোর ন্যায় এই ফিতনা আবির্ভূত হবে। যখনই তন্মধ্যে থেকে কোন এক ধরনের ফিতনা চলে যাবে, তখন আরেক প্রকার ফিতনা আসবে। তাতে মানুষের অন্তর মৃত্যুবরণ করবে যেমন তার দেহ মৃত্যু বরণ করে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২১ ]
হযরত আবু ওয়ায়েল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! নিঃসন্দেহে তোমাদের মাঝে এমন এক ফিতনা প্রকাশ পাবে, যা পরস্পর মহব্বত ভালোবাসাকে নষ্ট করে দিবে, তখন খুবই ধৈর্য্যশীল লোক পর্যন্ত ছোট্ট শিশুর ন্যায় অধৈর্য্য হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে এমন অস্থিরতা যা মূলতঃ পেটের পীড়ার আকার ধারণ করবে আর সেটা থেকে মুক্তির কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২২ ]
হযরত কাসীর ইবনে যুররা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছে, বালা- মসিবতের নিদর্শন এবং কিয়ামতের আলামত হচ্ছে, মানুষের জ্ঞান নষ্ট হয়ে যাবে, বুদ্ধি হ্রাস পাবে, পেরেশানী বেড়ে যাবে হক্বের আলামতগুলো উঠিয়ে নেয়া হবে এবং জুলুম প্রকাশ্যরূপ ধারন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২৪ ]
হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পঞ্চম ফিতনা হলো, অন্ধ ফিতনা,পূর্ণ বধির ফিতনা,তাতে মানুষ চতুষ্পদ প্রাণীর মত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১২৫]
আমের রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত হোজায়ফা রাযিঃ কে সবচেয়ে মারাত্মক ও কঠিন ফিতনা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যখন তোমার অন্তরে ভাল এবং খারাপ বিষয় পেশ করা হয় আর তুমি সংশয়ের মধ্যে থাকো যে, কোনটা গ্রহণ করবে, তখনই মনে কর যেন কঠিন ফিতনার সম্মুখিন হয়েছো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৩৫ ]
হযরত আলী রাযিঃ হতে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন, অনেক কম যুদ্ধে তোমরা বিজয় লাভ করতে পারবে। প্রথম জিহাদ হবে তোমাদের হাতের মাধ্যমে, এরপরের জিহাদ হবে তোমাদের মুখের দ্বারা, এরপরের জিহাদ চালাতে থাকবে কেবলমাত্র তোমাদের অন্তর দ্বারা। অতঃপর যে অন্তর সৎ কাজকে সৎকাজ এবং অসৎ কাজকে অসৎকাজ হিসেবে বুঝতে পারবেনা তারা উচ্চ স্তর থেকে নিম্নস্তরে পরিণত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৩৭]
হযরত আলী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোনো অন্তর ভালো কাজকে ভালো এবং খারাপ কাজকে খারাপ হিসেবে জানবেনা তার অধঃপতন শুরু হতে থাকে। অতঃপর যে উচ্চতায় উপনিত হোকনা কেন নিম্নমুখী হতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৩৮ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুছর রাযিঃ থেকে বর্ণনা কারীগণ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের অবস্থা কি হবে, যখন তোমরা বিশজন বা তার চেয়েও অধিক লোককে দেখবে যে, তাদের মধ্যে কেউ আল্লাহ তাআলাকে ভয় করেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১৪০ ]
Comments 0