মিশর-শাম এলাকায় মতপার্থক্য সৃষ্টিকারী ঝান্ডার বর্ননা ও বিজয়
মিশর-শাম এলাকায় মতপার্থক্য সৃষ্টিকারী ঝান্ডার বর্ননা ও বিজয়
হযরত হুজাইফা রাযিঃ হতে বণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম শহরের রাস্তাগুলো থেকে এমন কোনো রাস্তা কিংবা গ্রামের গলিসমূহ থেকে এমন কোনো গলি নেই যার সম্বন্ধে আমি জানিনা যে, হযরত ওসমান রাযিঃ কে শহীদ করার পর যাবতীয় ফিৎনা ফাসাদ প্রকাশ পাবে । অর্থাৎ, সবকিছু আমার কাছে পূর্ব থেকে জানা আছে।
[আল ফিতান: - ২৭ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাষিঃ হতে বণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন। আমার ওম্মত ধ্বংস হবেনা, যতক্ষণ পযন্ত তাদের মধ্যে তামায়ুযু, তামায়ূল ও মাআমু প্রকাশ না পাবে ।
হুজাইয়া রাযিঃ বলেন, আমি বললাম, ইয়ারাসূলুল্লাহ আমার আব্বা, আম্মা আপনার জন্য কুরবান হউক তামায়ুম কি জিনিস? রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, তামায়ুম হচ্ছে আমাবিয়্যাত বা স্বজনপ্রীতি যা আমার পরে মানুষের মাঝে ইসলামের ক্ষেত্রে প্রকাশ পাবে ।
অতঃপর জিজ্ঞাস করলাম, তামায়ূল কি জিনিস? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এক গোত্র অন্য গোত্রে প্রতি হামলা করবে এবং অত্যাচারের মাধ্যমে একে অপরের উপর আক্রমণ করাকে বৈধ মনে করবে ।
এরপর জানতে চাইলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! মাআমূ কি জিনিস? রাসূলুল্লাহ সাঃ জবাব দিলেন, এক শহরবাসী অন্য শহরবাসীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, যার কারণে তারা একে অপরের বিরোধীতায় মেতে উঠবে । এটা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতে প্রবেশ করালেন । তিনি আরো বললেন, এ অবস্থা তখনই হবে যখন ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশৃংঙ্খলা দেখা দিবে এবং বিশেষ কিছু লোকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো থাকবে । সুসংবাদ এ ব্যক্তির জন্য যাকে আল্লাহ তাআলা খাছ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসলাহ দান করেছেন।
[আল ফিতান: - ৩৫]
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব রাযিঃ বলেন, কিয়ামত সংঘঠিত হবেনা, যতক্ষণ পযন্ত তোমরা বড় বড় কিছু বিষয় স্বচক্ষ্যে দেখবেনা এবং তোমরা সেগুলো নিজেদের মধ্যেও আলোচনা করার সাহস পাবে না।
[ আল ফিতান: - ৪০]
হযরত হুযায়ফা (রাঃ) ও হযরত আবু মুসা (রাঃ) থেকে বণিত, তারা উভয়ে রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, যে, কিয়ামতের পূর্বে- এমন দিন আসবে যে তাতে মুখখতা অবতীর্ণ হতে থাকবে এবং “'হারজ' বেড়ে যাবে । লোকেরা প্রন করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ 'হারজ' কী? তিনি বললেন হত্যা।
[ আল ফিতান: - 8৯ ]
বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত আ'নাশ রহঃ থেকে বণিত, তার কাছে যিনি বর্ণনা করেছে তার কাছ থেকে তিনি নকল করেছেন, তিনি বলেন, তোমাদের কাছে যখনই এমন কোনো বালা মসিবত প্রকাশ পায়,যার কারণে তোমরা চিল্লাচিল্লি করবে, কিন্তু পিছনে এমন আরো বালা-মসিবত অপেক্ষা করছে যা এর থেকেও মারাত্মক । যে বালা মসিবত তোমাদেরকে পূবের মসিবতকে ভুলিয়ে দিবে।
[ আল ফিতান: - ৫০]
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন,তোমাদের মাঝে এবং তোমাদের উপর অকল্যান নিপতিত হওয়ার মাঝে একমাত্র দুরত্ব হলো ওমর (রাঃ) এর মৃত্যু ৷ (অর্থাৎ ওমর (রাঃ) এর মৃত্যুর পর থেকেই অকল্যাণ তথা ফিতনা আসতে থাকবে ।)
[আল ফিতান: - ৫২ ]
হযরত হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে এবং অকল্যাণের মাঝে একমাত্র দূরত্ব হলো একজন ব্যক্তি । তিনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন তখন তোমাদের উপর অকল্যাণকে ঢেলে দেওয়া হবে।
[ আল ফিতান:- ৫৩ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযষিঃ হতে বণিত,তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, সবপ্রথম পারস্যবাসীরা ধ্বংস হবে। তাদের ধ্বংসের পরপর আরবের অধিবাসীগণ ধ্বংস হতে থাকবে ।
[ আল ফিতান: - ৫৬ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাযিঃ হতে বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত মুজাহিদ রহঃ বণনা করেন । একদিন হযরত ইবনে ওমর রাষিঃ আবু কুবাইদের উপর কিছু সূউচ্চ বাড়ি দেখতে পেয়ে বললেন, হে মুজাহিদ! যখন তুমি মক্কার ঘর বাড়িকে তার আশ্বপাশ্বের বাড়ি ঘর থেকে উচু দেখতে পাবে এবং তার অলি-গলিতে পানি প্রবাহিত হতে দেখবে তখন তুমি অবশ্যই এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।
[ আল ফিতান: - ৫৯ ]
হযরত আবু ওয়ায়েল (রঃ) বলেন, আমি হুযায়ফা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি একদা আমরা হযরত ওমর (রাঃ) এর বসা ছিলাম । তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ফিতনা সম্পর্কীয় বাণী স্মরণ আছে? হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম,
আমার স্মরণ আছে তিনি যে ভাবে বলেছেন, হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, এ ব্যাপারে তুমি সৎসাহসী সুতরাং তা পেশ কর। আমি বললাম মানুষ ফিতনায় পড়বে তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে, মালসম্পদের ব্যাপারে, তার নিজের সন্তানসন্ততি ও পাড়া প্রতিবেশীর ব্যাপারে । তবে নামাজ, সদকা এবং ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ তা মিটিয়ে দেবে ।
হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, আমি এ ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সমুদ্রের তরঙ্গমালার মত উতিত হবে এবং তোলপাড় করে ফেলবে, সে ফিতনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম,হে আমীরুল মু'মিনীন! আপনি ভয় করবেন না, (তা তো আপনাকে পাবেনা ।)) কেননা সেই ফিতনা ও আপনার মধ্যে একটি আবদ্ধ দরজা রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা সেই দরজাটি কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে, না খোলা হবে? হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, খোলা হবে না; বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে । তখন হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, তাহলে তা আর কখনো বন্ধ করা হবেনা। আমি বললাম হ্যাঁ।
রাবী বলেন, তখন আমরা হযরত হুযায়ফা (রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা হযরত ওমর (রাঃ) কি জানতেন দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এমন নিশ্চিতভাবে জানতেন যেমন আগামীকালের পূর্বে রাত্রির আগমন সুনিশ্চিত । আমি তাঁকে (ওমর (রাঃ)কে) এমন একটি হাদীস বণনা করেছে,যা কোন গোলক ধাঁধা নয়। রাবী শাক্বীরব বলেন, আমরাতো এ ব্যাপারে হযরত হুযায়ফা (রাঃ)কে জিজ্ঞাসা করতে ভয় পাচ্ছিলাম তাই হযরত মাসরূক্বকে বললে তিনি হযরত হুযায়ফাকে জিজ্ঞাসা করলেন, দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, দরজাটি হলেন “ওমর” নিজেই ।
[ আল ফিতান: - ৬০]
হযরত কা'ব (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় মানুষের উপর এমন যুগ আসবে যে, মুমিন ব্যক্তি তার ঈমানের ব্যাপারে অপমানবোধ করবে৷ যেমন আজকাল পাপিষ্ট তার পাপের ব্যাপারে অপমান বোধ করে। এমনকি যে কোন ব্যক্তিকে বলা হবে যে, তুই তো মুসলমান, তুই তো ফকীহ । (ফিক্হশাস্ত্রবিদ)
[ আল ফিতান: - ৬১]
হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, যখন মিথ্যা প্রকাশ পাবে তখন হত্যা বেশী হতে থাকবে ।
[আল ফিতান: - ৬২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত নু'মান ইবনে বশির রাযিঃ হতে বণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে' এমন কিছু ফিৎনা প্রকাশ পাবে, যেন যেগুলো অন্ধকার রাতের একটা টুকরা ৷
সকাল বেলা যে লোক মুসলমান থাকবে বিকালে যে কাফের হয়ে যাবে । একদিন সন্ধ্যার সময় যে মুসলমান থাকবে, পরের সকালে সে কাফের হয়ে যাবে । মানুষ তাদের চরিত্রকে দুনিয়ার সামান্য ও নগন্য বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে ।
উক্ত হাদীসের বণনাকারীদের একজন হ্যরত হাসান বসরী রহঃ বলেন, আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিঃসন্দেহে আমি তাদেরকে এমন সূরতে দেখেছি, যেন তাদের মধ্যে কোনো বোধশক্তি নেই, তারা যেন জ্ঞান-বুদ্ধিবিহীন কিছু শরীর । তাদেরকে দেখলে মনে হয় আগুনের বিছানা এবং লোভি মাছি। সকাল করে দুই দেরহাম দ্বারা, সন্ধ্যা করে দুই দেরহামের মাধ্যমে । তারা নিজেদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে, সামান্য একটা ছাগলের টাকার বিনিময়ে ।
[আল ফিতান: - ৬৬ ] [সুনানে আবি দাউদ - ৪২৬১]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ হতে বণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়, কিয়ামতের পূর্বে হারজ বা গণহত্যা হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! হারজ কী? রাসূলুল্লাহ যাঃ বললেন, ব্যাপক হত্যা । আমরা সহসা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ! বর্তমানে যেমন হত্য চলছে তার থেকেও বেশি হবে! জবাবে তিনি বললেন, মুসলমানদের অবস্থা তখনকার যুগে বর্তমানের চেয়ে আরো উন্নত হবে ।
এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, তোমাদেরকে কাফেররা হত্যা করবেনা, বরং তোমরা নিজেরাই একে অপরকে হত্যা করবে। এমন কি মানুষ তার আপন ভাই, চাচাত ভাই এবং প্রতিবেশিকে হত্যা করবে । রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মুখ থেকে একথা শুনার সাথে সাথে উপস্থি সকলে এমনভাবে আশ্চর্য্যন্বিত হয়ে পড়ল, যার ফলে অনেক সময় স্পষ্ট বস্তও আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছিলনা।
[ আল ফিতান: - ৬৮ ]
বিশিষ্ট সাহাবি হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পযন্ত তোমরা তোমাদের ইমামকে হত্যা করবেনা এবং তোমরা অযথা তোমাদের তলোয়ার পরিচালনা করবেনা । আর তোমাদের নিকৃষ্টতম ব্যাক্তিরা পৃথিবির মালিক না হবে।
[ আল ফিতান: - ৭১] [ তিরমিজি -২১৭০]
Comments 0