বনু আব্বাস, আহলে মাশরিক, সুফিয়ানি ও মারওয়ানের মাঝে সংঘটিত ঘটনা-কিতাবুল-ফিতান
বনু আব্বাস, আহলে মাশরিক, সুফিয়ানি ও মারওয়ানের মাঝে সংঘটিত ঘটনা-কিতাবুল-ফিতান
হযরত সওবান রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ননা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ উম্মে হাবীবার সাথে আলোচনা করছিলেন, একপর্যায়ে বনুল আব্বাস এবং তাদের নেতৃত্বের আলোচনা আসলে রাসূলুল্লাহ সাঃ উম্মে হাবীবা রাযিঃ এর দিকে দৃষ্টি পাত করে বললেন, তাদের বংশের এক লোকের হাতেই বনু আব্বাসের ধ্বংস হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৫৬]
হযরত ওলীদ ইবনে মুসলিম রাঃ বলেন, কুজাআ বংশের লোকজন পশ্চিমাদের উপর বিজয়ী হলে তাদের কাছে তাদের বংশের একলোক আসবে। এরপর তাদের সাথি বনু আব্বাস আসবে এবং তার ভাগিনার সম্পর্কের লোকেরা কুফায় প্রবেশ করবে। সেখানে পৌঁছে সকলকে দেওলিয়া করে ছাড়বে।
এরপর তাদেরর শরীরে এক ধরনের ফোড়া দেখা দিলে সেখান থেকে শামের উদ্দেশ্যে বের হলে ইরাক শামের মধ্যবর্তী জায়গায় পৌঁছে মারা যাবে। এবং তাদের বংশেরই একজন নেতৃত্ব হাতে নিবে। সেই হচ্ছে, সুফিয়ানী নামক লোক, যার অনেক কান্ড কারখানা রয়েছে। যে লোক সর্ব স্থানে বিজয়ী হবে।
অতঃপর আরব বাসিরা তার বিরুদ্ধে শাম দেশে সৈন্য জমায়েত করবে এবং তাদের মধ্যে ভয়ানক এক যুদ্ধ হবে। এক পর্যায়ে যুদ্ধ মদীনার দিকে ধাবিত হবে, অতঃপর বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে তাদের মাঝে এক ভয়ানক যুদ্ধ সংঘঠিত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৫৭ ]
ইবনে শিহাব যুহরী রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, জনৈক লোক একটি ফোড়ায় আক্রান্ত হয়ে কূফা থেকে পলায়ন করতে গিয়ে মারা যাবে। পরবর্তীতে তার পিতার নামের একজন লোক তাদের জিম্মাদারী গ্রহন করবে। তার নাম হবে আলী আট হরফ বিশিষ্ট। নেতিকতাহীন লোক, পায়ের গোছা গোশতহীন বিশিষ্ট, মাথার উপরী ভাগ ন্যাড়া, কোটরা গত বিশিষ্ট চক্ষুদ্বয় তারপর লোকজন ধ্বংস হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮৫৮]
হযরত কা'ব রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, তার রাজত্ব হিমস নগরীতে ব্যাপক আকার ধারণ করবে এবং দিমাশকে আগুন জ্বালাতে থাকবে। আব্বাসের পতনের মাদ্ধমে সে শক্তিশালী হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৫৯ ]
হযরত ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী শাম বাসীদের থেকে বাইয়াত নিবে এবং মাশরিক বাসীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যাবে। ফলে তাদেরকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দিলে তারা মারাজুস সফর নামক এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করবে। তাদের সাথে শাম বাসীদের স্বাক্ষাত হলে মাশরিক বাসিরা পলায়ন করবে এবং সানিয়া পাহাড়ের উপর গিয়ে ঘাটি ফেলবে।
এরপর তাদের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হবে, সেখান থেকেও বিতাড়িত হয়ে হিমসে এসে পৌছবে। সেখানেও হামলার সম্মুখিন হবে এবং পিছু হঠে কারকীসিয়া নামক এক বিরান শহরে এসে পৌঁছবে। সেখানেও তীব্র যুদ্ধ হবে এবং মাশরিক বাসিরা পরাজিত হয়ে সে এলাকা ত্যাগপূর্বক আকের কূফা নামক এলাকার দিকে এসে পৌছবে।
আবারো তারা যুদ্ধের সম্মুখিন হবে এবং পরাজিত হয়ে সুফইয়ানী সুল আমওয়াল অতিক্রম করে যাবে। এহেন অবস্থায় সুফিয়ানীর গলায় একটি ফোড়া হবে। এবং সকাল বেলা কুফায় প্রবেশ করে বিকাল বেলা তার সৈন্য নিয়ে বের হয়ে যাবে। শাম দেশের বর্ডারে পৌঁছলে সে মারা যাবে।
এক পর্যায়ে শাম বাসিরা আতঙ্কিত হয়ে উঠবে এবং তারা আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে কালবিয়্যাহ নামক এক লোকের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। যার চোখ কোটরাগত হবে, চেহারা হবে উজ্জল। এদিকে মাশরিক বাহিনীর কাছে সুফিয়ানীর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছলে, তারা বলবে শাম বাসীদের রাজত্ব হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
অতঃপর তারা হামলা করার জন্য এগিয়ে যাবে। ঐ দিকে ইবনুল কালবিয়্যাহ নিকটও এসংবাদ পৌঁছলে সেও সর্ব শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসবে এবং উলূবিয়্যাহ নামক স্থানে উভয় দল যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং মাশরিক বাসিরা আবারো পারাজিত হয়ে পলায়ন করবে। এক পর্যায়ে কূফা নগরীতে এসে প্রবেশ করবে। ইবনুল কালবিয়্যাহ সেখানেও আক্রমন করবে এবং নারী-পুরুষ, শিশুসহ সবাইকে বন্দি করবে। এবং কুফা নগরী বিরান ভূমিতে পরিণত হবে। অতঃপর সেখান থেকে হেজাজ অভিমূখে একটা বিশাল বাহিনী রওয়ানা দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬০ ]
হযরত আরতাত ইবনুল মুনজির রহঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, অভিশপ্ত উজ্জল চেহারা বিশিষ্ট লোকটি মুন্দিরুন এলাকা থেকে বের হবে। যেটা হবে বায়ছানের পশ্চিম দিকে। প্রকাশ পাবে লাল একটি উটির উপর আরোহন করে। তার মাথায় মুকুট থাকবে উক্ত দল পর পর দুইবার পরাজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। সে টেক্স গ্রহন করবে এবং সকলকে বন্দি করবে, আর গর্ভবতী মহিলাদের পেট চিড়ে বাচ্চা বের করে আনবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬১]
হযরত কা'ব রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী আত্মপ্রকাশ করার পর পশ্চিমাদের এক দলকে নিজের দিকে আহ্বান করবে। তার আহবানে সাড়া দিয়ে এতবেশি লোকের জমায়েত হবে, যা ইতিপূর্বে কারো জন্য হয়নি। অতঃপর কূফাতুল আম্বার থেকে একটা দল প্রেরন করবে। উভয় দল কারকীসিয়্যা নামক স্থানে পরস্পরের সাথে মিলিত হলে তাদের থেকে ধৈর্য্যকে দূর করে দেয়া হবে এবং সাহায্য তুলে নেয়া হবে।
যদি তার বাহিনী পশ্চিমদিক থেকে আত্ন প্রকাশ করে তাহলে প্রথমে ছোট্ট একটি যুদ্ধ হবে তখনই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহর ধ্বংস হবে। যিনি হিমস নগরীর দিকে হামলার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাবে। সে হবে নিকৃষ্টতম ধূর্ত ব্যক্তি সে দিমাশকে আগুন জালাবে এবং তার হাতে হবে মাশরিক বাসীদের পতন ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬২ ]
মুহাম্মদ ইবনে হিমইয়ার তার কতিপয় শেখ থেকে বর্ননা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, শাম এবং ইরাক বাসীরা হিমস নগরীতে একে অপরের উপর আক্রমন করবে, তখন ইরাক বাসীরা পরাজিত হবে এবং তাদেরকে হত্যা করতে করতে নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬৩ ]
হযরত খালেদ ইবনে মা'দান রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী বিরাট এক বাহিনীকে মোট দুই বার পরাজিত করবে, পরবর্তীতে সে নিজেও ধ্বংস হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬৫]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, বিশাল একটি জামাআতকে সুফিয়ানী দুই দুইবার পরাজিত করে তাদের উপর কর আরোপ করবে এবং তাদের জনগণকে বন্দি করবে। কুরাইশের জনৈকা নারীকে যবেহ করার মাধ্যমে হত্যা করে তার পেট চিড়ে বাচ্চা বের করে আনবে।
সেই হবে বনু হাশেমের পেট চিড়ে যাদের বাচ্চা বের করা হয়েছে তাদের অন্যতম । এরপর সুফিয়ানী মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যদের থেকে কতিপয় লোক ব্যাপক ভাবে হামলে পড়বে। কয়েক বৎসর পর নিকৃষ্টতম এক লোক, অভিশপ্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত লোকজনকে তার প্রতি আহবান জানাবে। তার নাম হবে আব্দুল্লাহ। সে নিজে যেমন অভিশপ্ত হবে, তার অনুসারীরাও অভিশপ্ত হবে।
তাদের প্রতি আসমান-জমিনের অধিবাসি সকলে অভিশাপ দিবে। সে হবে মানুষের কলিজা ভক্ষনকারী। সে দিমাশকে এসে তার মিম্বরে আরোহন করবে। তার যাবতীয় নির্দেশ হিমস নগরী পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এবং সে দিমাশকে আগুন জ্বালিয়ে দিবে। এবং সেটা হবে, বনুল আব্বাছ থেকে দুইজন লোক যারা একই বংশের হবে যখন সিংহাসনের দাবীদার হবে।
প্রথমজন দ্বিতীয় জনের সাথে মতবিরোধে লিপ্ত হলে সুফিয়ানীর আত্নপ্রকাশ ঘটবে। সে হবে অল্প বয়স্ক, কোকড়ানো চুল বিশিষ্ট। সাদা রংয়ের অধিকারী এবং লম্বা প্রকৃতির। তাদের মাঝে শাম দেশে অনেক গুলো যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং বনুল আব্বাসের অনেক নারীকে বন্দি করে দিমাশকে ফেরৎ পাঠানো হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬৬ ]
হযরত আরতাত ইবনে মুনযির থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী তার নিজের বিরোধীতা কারীদেরকে হত্যা করে তাদেরকে পেরেক দ্বারা আটকিয়ে ঝুলিয়ে রাখবে। তাদের গোশত বড় এক পাতিলে পাকানো হবে। এভাবে দীর্ঘ ছয় মাস পর্যন্ত চলতে থাকবে। এক পর্যায়ে মাশরিক মাগরিব বাহিনী পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৮৬৭ ]
Comments 0