বর্বর জাতি কর্তৃক ফাসাদ সৃষ্টি, মিশর ও শামের ভূখন্ডে তাদের যুদ্ধ এবং অনিষ্টতার বর্ননা
বর্বর জাতি কর্তৃক ফাসাদ সৃষ্টি, মিশর ও শামের ভূখন্ডে তাদের যুদ্ধ এবং অনিষ্টতার বর্ননা
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি একদা মিসর বাসীকে সম্বোধন করে বলেন, হে মিশরীগণ! যখন পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের দিকে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আসবে এবং তারা পুলের উপর থাকা অবস্থায় তোমাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তোমাদের এবং তাদের মিলিয়ে প্রায় সত্তর হাজার যোদ্ধা হবে। সে তোমাদেরকে মিশর এবং শাম দেশ থেকে লাঞ্চিত অবস্থায় কাফের আখ্যায়িত করে বের করে দিবে। ঐপরিস্থিতিতে জনৈকা আরবী মহিলা পঁচিশ দেরহাম নিয়ে দিমাশকের গেইটে অবস্থান করবে।
অতঃপর পশ্চিমারা হিমস নগরীতে প্রবেশ করে দীর্ঘ আঠার মাস পর্যন্ত অবস্থান করবে। এদিনগুলোতে তারা যাবতীয় সম্পদ বিলি করবে এবং নারী-পুরুষদেরকে নির্বিচারে হত্যা করবে। কিছুদিন পর আসমানের নিচে অবস্থানরত নিকৃষ্ট লোকদের অন্যতম একজন তাদের প্রতি ধেয়ে আসবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে পরাজিত করবে। এক পর্যায়ে তার হিমস নগরী ছেড়ে দিয়ে মিশরের ভুখন্ডে প্রবেশ করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৬৫ ]
হযরত মাসলামা ইবনে আব্দুল মালিক থেকে বর্নিত তিনি এরশাদ করেন, পশ্চিমের বাসিন্দাগণ হিমস নগরীকে দীর্ঘ ষোলমাস পর্যন্ত দখল করে রাখবে। বর্ননাকারী সাকার বলেন, আমি সাঈদ ইবনে মোহাজিরকে বলতে শুনেছি, যখন পশ্চিমা ফিৎনা ব্যাপক আকার ধারন করবে তখন তুমি ইয়ামানের দিকে চলে যাও। কেননা, ঐ মুহূর্তে ইয়ামান ছাড়া অন্য কোনো দেশ তাদের হাত থেক রক্ষা পাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৭৬৬ ]
প্রসিদ্ধ সাহাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন মাগরিব বাসীরা মিশর ভুখন্ডে প্রবেশ করে এতক্ষন পর্যন্ত অবস্থান করবে। মিশরের আদিবসিকে হত্যা করবে এবং বন্দি করবে। সে সময় অনেক ক্রন্দনকারী মহিলা তাদের সম্ভ্রম লুন্ঠিত হওয়ার কারনে বিলাপ করতে থাকবে, অনেকে কান্নাকাটি করবে তাদের সম্মানহানী হওয়ার কারনে । আবার অনেকে কাঁদবে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করার কারনে। আবার কেউ কেউ বিলাপ করতে থাকবে মৃত্যু ও কবরকে আলিঙ্গন করার জন্য।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৬৭ ]
হযরত আবু ওয়াহাব আল কালাঈ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, যখন পশ্চিমারা দখল করার নিয়তে এগিয়ে আসবে, তাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য আরবরাও ধেয়ে আসবে। এক পর্যায়ে সকল আরবগন শাম দেশে এসে চারটি পতাকার অধীনে সমবেত হবে। একটি পতাকা হবে কুরাইশ এবং তাদের অনুগতদের, দ্বিতীয়টি হবে কাইস এবং তাদের অধিনস্থদের, তৃতীয়টি হবে কাইয়ান এবং তাদের অনুসারীদের এবং চতুর্থটি হবে কুজাআ গোত্রের।
আরবরা কুরাইশদেরকে বলবে এগিয়ে যাও এবং তোমাদের রাজত্বের জন্য যুদ্ধ কর। এক পর্যায়ে কুরাইশরা এগিয়ে যাবে এবং তীব্র ভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, তবে এতে কোন লাভ হবেনা। অতঃপর কাইস গোত্র এগিয়ে আসবে, তাতেও কোনো উপকার হবেনা।
এতটুকু পর্যন্ত বলে বর্ননাকারী আবু ওয়াহাব রহঃ হযরত খালেদ ইবনে জহীর আল-কালবী রহঃ এর কাধে হাত রেখে বললেন, অতঃপর আমি তোমাকে এবং তোমার গোত্র আল বালাকুল বুকা কে দেখলাম তারা বিজয় বেশে ফিরে আসছে। ওলীদ বলেন, সেদিন একমাত্র কুজায়া গোত্রই পশ্চিমাদেরকে পরাজিত করে জয়লাভ করবে। তাদের সাথে অনেকে থাকবে যারা ইতোমধ্যে তাদের অনুস্বরণ করছিল এবং তারা বিভিন্ন গোত্রের দিকে যেতে থাকবে এবং মাশরিক বাসীদের সাথেও যুদ্ধ করতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৬৮ ]
ইবনে শিহাব যুহরী থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ফিতনা কালীন যুগে কালো এবং হলুদ ঝান্ডা বিশিষ্ট লোকজন পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করতে থাকবে। এক পর্যায়ে তারা ফিলিস্তিন নগরীতে আসবে। অতঃপর মাশরিকদের থেকে সুফিয়ানী নামক জনৈক লোক বের হয়ে আসবে। পশ্চিমারা জর্ডানে এসে পৌছলে তাদের নেতা হঠাৎ করে মারা যাবে এবং তারা তিন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
একদল যেদিক এসেছিল সেদিকে ফেরত যাবে, অন্যদল হজ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে এবং আরেকদল সেখানেই থেকে যাবে। এক পর্যায়ে তাদের সাথে সুফিয়ানীর যুদ্ধ হবে। মাগরিব বাসীদের অবশিষ্টাংশ পরাজিত হয়ে তার অধীন হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৬৯ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন মাগরিব বাসিদের প্রাথমিক দল দিমাশকের মসজিদে প্রবেশ করবে। তারা সেখানে প্রবেশ করে মসজিদের সৌন্দর্য্য ও কারুকার্য গুলো দেখে আশ্চর্য্য প্রকাশ করতে থাকবে। হঠাৎ করে ভুমকম্প আরম্ভ হবে, যার ফলে দিমাশকের মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে গভীর গর্ত হয়ে যাবে এবং হারাস্তা নামক গ্রাম নিচের দিকে ধ্বসে পড়বে। এহেন পরেস্থিতিতে সুফিয়ানীরা প্রকাশ পাবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর তাদেরকে মিশরের দিকে ধাওয়া করবে। কিছুদিন পর আবারো সে আসবে এবং মাশরিক বাসিদের সাথে যুদ্ধ করে তাদেরকে ইরাকের দিকে পাঠিয়ে দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭০ ]
হযরত কা'ব রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন বর্বর জাতির আবির্ভাব ঘটবে তখন তারা মিশরে এসে ঘাটি ফেলবে। তারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে একদল থাকবে মিশরে এবং আরেক দল অবস্থান নিবে ফিলিস্তিনে। এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে তারা হিমস নামক এলাকায় এসে পৌছবে। তখনই তাদের উপর মসিবতের পাহাড় নেমে আসবে। লাগাতার চল্লিশ দিন তাদের উপর বরফ বর্ষণ হবে।
তারপর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। এক পর্যায়ে তারা হিমস নগরী জয় করবে এবং সেখানে প্রবেশ করে আবারো বের হয়ে গিয়ে পশ্চিম গেইট এবং ব্রিজের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান গ্রহন করবে। যে ব্রিজটি বাজারের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে বুহাইরায়ে ফামিয়া কিংবা তার কাছাকাছি স্থানে অবস্থান নিবে। অতঃপর কিছুলোক তাদের গতিরোধ করবে এবং তাদের সাথে তীব্রভাবে যুদ্ধ করবে। তাদের নেতা থাকবে ইসমাঈল আঃ এর সন্তানদের একজন।
উম্মুল আরব নামক এক গ্রামে মূলতঃ তারা যুদ্ধে লিপ্ত হবে। অতঃপর হঠাৎ করে একলোক তীব্র গতিতে ধেয়ে আসবে এবং আযাদদেরকে হত্যা করবে এবং কিছু লোককে বন্দি করে ফেলবে আর মহিলাদের পেট চিরে বাচ্চা বের করে আনবে উক্ত দল মোট দুই বার পরাজিত হবে এবং সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদেরকে কুরাইশের এক সাহসী নারী জবেহ করতে থাকবে এবং ইতোমধ্যে যারা বনু হাশেমের মহিলাদের পেট চিরে বাচ্চা বের করেছিল তাদের পেট চিরে ফেলবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭১ ]
নোটঃ উত্তর আফ্রিকার অধিবাসী প্রাচীন জাতীগুলোর লোকদের আরবরা বর্বর বলত
হিমস বাসিরা বর্বর জাতির জন্য শামের বাসিন্দাদের তুলনায় কঠোর হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৭৭৩ ]
হযরত কা'ব রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, শাম দেশের বাসিন্দারা বড়ই নিরাপদ এবং ভাগ্যবান তাদের সৈন্যরা যারা হলুদ ঝান্ডার অধিকারী। তেমনি ভাবে দিমাশকের অধিবাসিরাও। শাম বাসিদের মধ্যে নিকৃষ্টতম বাসিন্দা এবং নিকৃষ্টতম সৈন্য হচ্ছে, হিমস বাসিরা। অতিসত্ত্বর তারা শাম দেশে এমন ভাবে প্রবেশ করবে যেমন, পানি কলসিতে প্রবেশ করে থাকে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭৪ ]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, কসম সে সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! অতি স্বত্তর হিমস নগরীতে বর্বর বাহিনী প্রবেশ করবে। তাদের সর্বশেষ দল সেখানের বাসিন্দাদের ঘরের দরজার লক খুকে ফেলবে এবং তাদের একটা অংশ ফিলিস্তিনে অবস্থান নিবে। অতঃপর তারা হিমস থেকে বের হয়ে বুহাইরায়ে ফামিয়া কিংবা তার থেকে এক মাইলের কাছাকাছি এলাকায় চলে যাবে। তখন তাদের দিকে বাহিরের একজন ধেয়ে আসবে এবং তাদেরকে হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭৫ ]
কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন পশ্চিমারা মিশর বাসির উপর জয়লাভ করবে তখন শাম বাসিদের জন্য জমিনের নিচের অংশ উত্তম উপরের অংশ থেকে। বড়ই দূর্ভাগ্য ফিলিস্তিন এবং জর্দানের সৈন্যদের জন্য। এদিকে হিমস শহর বর্বর জাতি দ্বারা মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হবে। তাদের তলোয়ার দ্বারা আতর এবং কিন্দার এক লেংড়া লোকের ঘরের দরজায় আঘাত করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭৬ ]
হাসসান রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, কখনো বলা হয়ে থাকে সে, যখন হলুদ ঝান্ডার অধিকারীগন মিশর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে তখন তোমরা নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে সেখান থেকে পালায়ন কর। আর যদি তোমার কাছে এ সংবাদ পৌছে যে, তারা শাম দেশে চলে এসেছে তখন তুমি তোমার সাধ্যমত আসমানের নিচে নিরাপদ কোনো স্থান তালাশ করে নাও আথবা তার জন্য নিজের সবকিছু ব্যয় করতে হলেও কর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭৭ ]
হযরত হাসসান ইবনে আতিয়াহ রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা হলুদ ঝান্ডাবাহি লোকজনকে দেখতে পাবে তখন জমিনের উপরের অংশের তুলনায় নিচের অংশ আনেক উত্তম ও নিরাপদ হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৭৮ ]
কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন বর্বর জাতি হিমস থেকে বের হয়ে ফামিয়ার দিকে যেতে থাকবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পাকড়াও করবেন এবং তাদের সাওয়ারীকে একধরনের মহামারীতে আক্রান্ত করবেন, যদ্বারা তাদের প্রতিটি সাওয়ারী সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে অতঃপর তাদেরকে মুতান এবং বাতানের প্রতি দেশান্তর করা হবে, যার কারনে তার মাশরিকের কালো পাহাড়ের পাদদেশে পলায়ন করে লুকিয়ে থাকবে। এ অবস্থা দেখে মুসলমানরা তাদের পিছু নিবে এবং উভয়ের মাঝে তীব্র লড়াই সংঘটিত হবে। এমনকি মুসলমানদের একজন তাদের সত্তর জনকে পর্যন্ত হত্যা করবে। প্রান নিয়ে তাদের সামান্যই ফেরত যেতে পারবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৮০ ]
হযরত তাবী রহঃ কা'ব রাঃ থেকে বর্ননা করেন, তিনি বলেন, যখন তুমি হলুদ ঝান্ডা বাহী দলকে ইস্কান্দারিয়া (আলেকজান্দ্রিয়া) অবস্থান করতে দেখবে অতঃপর তারা ছুররাতাশ শামে আসবে তখনই হারাস্তা নামক দিমাশকের একটি জনপদ ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৭৮১ ]
হযরত কা'ব রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে মিশরবাসীরা রশির বিনিময়ে জুন নামক এলাকাকে ভাগাভাগি করে নিবে। সেটা হয় নীলনদের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে অথবা তীব্র ভাবে প্রবাহিত হয়ে ডুবে যাওয়ার কারনে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৮২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কা'বা শরীফে আক্রমন করা কালীন আমি হযরত আব্দল্লাহ ইবনে ওমরের কাছে গেলে তিনি বললেন, যখন মাশরিকের দিক থেকে কালো ঝান্ডাবাহী এবং মাগরিবের দিক থেকে হলুদ ঝান্ডাবাহী এসে দিমাশকে মিলিত হবে তখনই বিভিন্ন ধরনের বালা- মুসিবত একেরপর এক প্রকাশ হতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৮৩ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ওকবা ইবনে আমের জুহুনী রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন পশ্চিমারা বের হবে তখন রোমবাসিরা তাদের পিছু নিবে এবং ইস্কান্দারিয়া, মিশর ও শামের পার্শ্বে উভয়ের মাঝে তীব্র যুদ্ধ হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৮৭ ]
হযরত আব্দুল্লাহ রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি একদিন তার ঘরের ছাদে উঠে কুফা নগরীর দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে বললেন, অতি সত্ত্বর মাগরিবের দিক থেকে আগত এক জাতি উক্ত শহরকে মারাত্নক বিরান ভূমিতে পরিণত করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৮৯ ]
হযরত সাফওয়ান তারা কতিপয় শেখ থেকে বর্ননা করেন, তিনি বলেন, রোমবাসিদের যারা হিমস নগরীতে বসবাস করবে তারা সর্বদা বর্বর জাতির আক্রমনের ব্যাপারে ভীত থাকবে এবং তাদের আক্রমন থেকে মুক্তির চেষ্টা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯১ ]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন শাম দেশের ভূখন্ডে যখন কালো ও হলুদ ঝান্ডা বহন কারীরা একত্রিত তখন মাটির ভিতরের অংশ উপরের অংশ থেকে অনেক উত্তম হবে। হাদীস বর্ননাকারী সাফওয়ান বলেন, হিমসের গেইট থেকে বর্বর জাতিরা তারা ব্যতীত অন্য সবাইকে বের করে দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৭৯২]
ইবনে শিহাব যুহরী রহঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, যখন মাশরিক এবং মাগরিবের বাসিন্দাগন হলুদ ঝান্ডার অধীনে মিশরে একত্রিত হবে যখন কান তারার নিকটে তাদের মধ্যে সাতবার যুদ্ধ হবে। অতঃপর তারা রামাল্লায় চলে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯৩ ] -
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ফিহর গোত্র থেকে জনৈক লোক বের হয়ে বর্বর জাতির সাথে মিলিত হবে। অতঃপর আবু সুফিয়ানের সন্তানদের থেকে জনৈক লোক প্রকাশ পাবে। যখন ফিহরের লোকটি তার আগমনের সংবাদ পাবে তখন তারা তিন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। একদল ফিরে যাবে। দ্বিতীয়দল তার সাথে অটল থাকবে এবং শাম দেশের দিকে চলে যাবে। অন্য আরেকদল হেজাজের দিকে যেতে থাকবে। এক পর্যায়ে আনসান নামক ভূখন্ডে শামবাসিদের সাথে তাদের স্বাক্ষাত হবে এবং বর্বর জাতি পরাজিত হবে। অতঃপর শাম বাসীরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯৪ ]
হযরত আরতাত ইবনুল মুনজির থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বর্বর জাতি এসে ফিলিস্তিন এবং জর্দানের মাঝামাঝি জায়গায় ঘাঁটি করবে। অতঃপর তাদের মাশরিক এবং শামের সম্মিলিত বাহিনী তাদের দিকে এগিয়ে ধাবিত হয়ে জাবিয়া নামক স্থানে অবস্থান গ্রহন করবে। এক পর্যায়ে সাখার এর সন্তানদের থেকে একজন দুর্বলচিত্তে প্রকাশ পাবে এবং বায়ছানের পাহাড়ে পশ্চিমাদের সাথে তার সাক্ষাত হবে।
অতঃপর তাদেরকে বায়ছান থেকে বিতাড়িত করবে। তারা আবারো পরেরদিন পরস্পরের সাথে দেখা হবে এবং সেখান থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করবে। এক পর্যায়ে তারা পিছন থেকে মারাত্নক ভাবে আক্রান্ত হবে। তৃতীয়দিন তারা আবারো মিলিত হবে এবং তাদেরকে আইনুর রীহ পর্যন্ত ধাওয়া করবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে হঠাৎ তাদের নেতার মৃত্যু হবে এবং তারা তিনদলে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
একদল নিজেদের এলাকায় ফিরে যাবে, আরেকদল হিজায ভূমিতে গিয়ে আশ্রয় নিবে এবং অন্যদলটি চলে যাবে সাখরা নামক স্থানে। তারা অন্য দলের খোজে চলতে থাকবে এক পর্যয়ে ফাতাক নামক এলাকার পর্বতের চুড়ায় উপনীত হবে এবং যেখানে তাদের দেখা মিলবে। সেখান থেকে তাদেরকে সাখরা নামক ভুখন্ডের দিকে ইঙ্গিত করা হবে।
অতঃপর শাম এবং মাশরিক বাহিনী একে অপরের প্রতি আন্তরিক হয়ে উঠবে, এবং উভয়ে একস্থানে মিলিত হবে। তখন তাদেরকে জাবিয়া এবং খারিবার মাঝামাঝি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। তখনই তাদের মাঝে ভয়ানক এক যুদ্ধ হবে, যার কারনে তাদের ঘোড়া রক্ত সাগরে হাবুডুবু খেতে এবং শাম বাসিরা তাদের সর্দারকে হত্যা করবে। আর তাদেরকে সাখরা পর্যন্ত ধাওয়া করে নিয়ে যাবে। তাদের দিমাশকে নিয়ে গিয়ে হাত-পা কর্তন করা হবে।
এক পর্যায়ে মাশরিকের দিক থেকে কালো ঝান্ডাবিশিষ্ট একটি বাহিনী প্রকাশ পাবে, যারা কুফা নগরীতে এসে অবস্থআন করবে এবং তাদের সর্দার সেখানে আত্মগোপন করবে। যার কারনে তার অবস্থান চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে যাবে। ফলে উক্ত বাহিনী শংকিত অবস্থায় দিনাতি পাত করতে থাকবে।
অতঃপর বতনুল ওয়াদী নামক স্থানে আত্নগোপন করা একলোক হঠাৎ করে আত্নপ্রকাশ করে উক্ত বাহিনীর হাল ধরবে। তার আত্নপ্রকাশের মূল কারন হচ্ছে, সাখার বাসিরা তার পরিবারের সাথে কৃত কর্মের প্রতিশোধ নেয়া। ফলে সে মাশরিক বাহিনীকে নিয়ে শামের দিকে যেতে যেতে সাখরা ভূখন্ডে এসে উপনীত হবে। তার উদ্দেশ্য কিন্তু এ শহরই ছিল। এহেন পরিস্থিতিতে তার দিকে পশ্চিমা বাহিনীও ধেয়ে আসবে। তারা উভয় দল হিমস নগরীর একটি পাহাড়ে মিলিত হবে। তাদের এ যুদ্ধে অনেক জ্ঞানী লোক মারা যাবে।
এক পর্যায়ে মাশরিক বাহিনী পলায়ন করতে থাকলে সাখরা বাহিনী তাদের পিছু নিবে। এবং দুই নদীর সংযোগস্থলের পার্শ্বে কার কিসিয়া নামক স্থানে তাকে পেয়ে যাবে এবং উভয়ে মিলিত হবে। তাদের উপর কঠিন বিপদ নেমে আসলে, যার কারনে মাশরিকীদের থেকে প্রায় দশ জনের সাত জনকে হত্যা করা হয়। এবং সাখারী বাহিনী কূফা নগরীতে প্রবেশ করবে, যার কারনে তাদের উপর ভুমি কম্পের আঘাত নেমে আসবে এবং পশ্চিমাদের থেকে এক লোক মাশরিক বাহিনী যেদিকে রয়েছে সেদিকে যেতে থাকবে, তার সামনে তাদের বন্দিদেরকে উপস্থিত করতে বলবে। এভাবে কথাবার্তা চলতে থাকবে।
হঠাৎ মক্কা নগরীতে মাহদী আঃ এর আগমনের সংবাদ আসবে। তার বিরুদ্ধে কূফা নগরী থেকে একটি বাহিনী আত্ন প্রকাশ করলে তাদের গোটা দলকে মাটিতে ধসে দেয়া হবে। বর্ননাকারী হযরত আরতাত রহঃ বলেন, মাসরিক এবং মাগরিব বাহিনী ব্রীজের পাদদেশে সাতদিন পর্যন্ত অবস্থান করবে, অতঃপর তারা আরীশা নামক স্থানে আবারো স্বাক্ষাত করবে।
এক পর্যায়ে মাশরিক বাহিনী পৃষ্ট প্রদর্শন করে জর্দান এসে পৌঁছবে। সেখানে পৌছার সাথে সাথে সুফিয়ানী আত্ন প্রকাশ করবে। ইতোমধ্যে হিমসে অবস্থান কারী রোম বসিরা বর্বর জাতির আক্রমনের ব্যাপারে ভীত সন্ত্রস্থ থাকবে এবং তারা বলবে, হে তামরা! বর্বর দ্বারা তোমাদের ধ্বংস হোক। এখানে তামরা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, হিমস এলাকা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯৬ ]
হযরত নাজীব রহঃ বর্নিত, তিনি বলেন, পশ্চিমাদের থেকে আব্দুর রহমান নামক একলোক আত্মপ্রকাশ করবে। ইতোমধ্যে রোম বাসিরা ইস্কান্দারিয়ার উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে স্বক্ষম হয়েছে। তারা সেখানে থাকা কালীন তাদের সাথে ভয়ানক যুদ্ধ হবে এবং তারা পরাজিত হয়ে উক্ত এলাকা থেকে বিতাড়িত হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯৭ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ'স রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, খারাপি ও অকল্যানকে সত্তর ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, তার থেকে উনসত্তর ভাগ থাকবে বর্বর জাতির মধ্যে এবং মাত্র এক ভাগ হচ্ছে গোটা জাতির মধ্যে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৭৯৮ ]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন কালো এবং হলুদ ঝান্ডাবাহী বাহিনী শামদেশের পার্শ্বে পরস্পর মিলিত হবে তখন মাটির নিচের অংশ তার উপরের অংশ থেকে অনেক উত্তম হবে। হদীস বর্ননাকারী সাফওয়ান বলেন, অতিসত্ত্বর বর্বরজাতি হিমস নগরীর গেইটকে ভেঙ্গে ফেলবে। এ অবস্থাটা পূর্বের অবস্থার চেয়ে আরো মারাত্নক হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৮০১ ]
Comments 0