আব্বাসীয় খেলাফত পতনের প্রথম আলামত-কিতাবুল ফিতান
আব্বাসীয় খেলাফত পতনের প্রথম আলামত-কিতাবুল ফিতান
হযরত আরতাত রহঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্বাসী খেলাফত ধ্বংস তখনই হবে যখন তাদের পরস্পরের মধ্যে এখতেলাফ দেখা দিবে। সে হিসেবে তাদের রাজত্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে, পরস্পরের সাথে এখতেলাফে লিপ্ত হওয়া।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৮৬] -
হযরত আবু কুবাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আব্বাসীয় খেলাফতের পতন না হওয়া পর্যন্ত লোকজন খুবই আনন্দময় জীবন-যাপন করবে। আর যখন তাদের রাজত্ব খতম হয়ে যাবে তখন থেকে বিভিন্ন ধরনের ফেৎনা-ফাসাদ আসতে থাকবে এবং সেটা মাহদীর আগমন পর্যন্ত চলতে থাকবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৮৭ ]
আবু উমাইয়া আল-কালবী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে এমন একজন শায়খ হাদীস বয়ান করেছেন যিনি জাহেলী যুগও প্রাপ্ত হয়েছেন এবং বয়সের কারণে তার ভ্রুযুগল চোখের উপর এসে পড়েছে। তিনি এরশাদ করেন, কালো ঝান্ডাবাহী লোকজন প্রচন্ড রণশক্তির অধিকারী হবে, এভাবে চলার এক পর্যায়ে তারা পরস্পরের সাথে এখতিলাফে লিপ্ত হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৮৮ ]
আব্দুস সালাম ইবেন মাসলাম রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু কুবাইলকে বলতে শুনেছি, তাদের ক্ষমতা খুব ভালোভাবে চলতে থাকবে। একসময় তাদের বংশের দুই জন ছোট্ট বালকের জন্য বাইয়াত করানো কারনে তাদের মধ্যে এখতেলাফ চলতে থাকবে এবং সেটা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। এক পর্যায়ে শাম দেশে তিন ধরনের ঝান্ডার আত্মপ্রকাশ হবে। এটা প্রকাশ হওয়ার পরপরই আব্বাসী খেলাফতের পতন হতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৮৯ ]
হযরত খালেদ ইবেন আবু ইমরান রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রাযিঃ এরশাদ করেছেন, অতিসত্ত্বর এমন কতক ইমাম তোমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করবে যারা খুবই ঘৃণীত হবে। যখন তারা তিনটি ঝান্ডার অধীনে বিভক্ত হয়ে পড়বে তখন জেনে রাখ, তাদের পতন অনিবার্য ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯ ]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আব্বাসী খলীফাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখাদিবে তখন সেটাই হবে তাদের রাজত্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯৩ |
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বনু আব্বাসের সপ্তম পুরুষ লোকজনকে কুফরীর প্রতি আহবান জানাবে তবে তারা কেউ তার আহবানে সাড়া দিবেনা। অতঃপর তাকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে একজন বলবে, তুমি কি আমাদেরকে আমাদের ধর্ম থেকে বের করে নিয়ে আসতে চাও?
সে জবাবে বলবে, আমি তোমাদেরকে হযরত আবু বকর রাযিঃ ও হযরত ওমর রাখিঃ এর আদর্শে আদর্শবান করতে চাই। তার আহবানে সাড়া দিতে সকলে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয় তার পরিবার বনুহাশেমের ইনসাফগার একজন লোক তাকে হত্যা করে ফেলে। যখন তার উপর হামলা করে তখন তাদের মাঝে মারাত্মক এখতেলাফ সৃষ্টি হবে। সে এখতেলাফ সুফিয়ানীর আবির্ভাব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯৪ ] -
হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রাযিঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, কালো ঝান্ডাবাহী লোকজনের মাঝে মতবিরোধ দেখা দিলে ইরম নামক এলাকায় একটি গ্রাম ধসে পড়বে, যে গ্রামকে মূলতঃ খোরাস্তা বলা হয়। আর তখনই শাম থেকে তিন প্রকার ঝান্ডার অধিকারী লোকজনের আগমন হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯৫ ] -
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, বনু আব্বাছের দুইজন লোক যখন তাদের অধীনস্থতা ত্যাগ করে নিজেদের মধ্যে এখতেলাফের সূত্রপাত করবে, তখন ধীরে ধীরে উক্ত এখতেলাফ ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং তাদের পতনের কারণ হবে। দ্বিতীয় এখতেলাফের সময় সুফিয়ানীর আগমন ঘটবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯৬ ] -
হযরত আবুল জিলদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, জনৈক বনু হাশেম এবং তার ছেলে দীর্ঘ বাহাত্তর বৎসর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯৭ ]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, নয় মাস কম এক হাজার বৎসর পর্যন্ত বনু আব্বাছগন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে। এরপর তাদের জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে, উক্ত ধ্বংসের পর আরো অনেক অনেক ধ্বংস উপস্থিত রয়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৯৮ ]
মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ রহঃ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, বনু আব্বাছন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে চলবে। এরপর তার নিজেদের মধ্যে এখতেলাফে জড়িত হয়ে যাবে । তখন তারা পলায়ন করার জন্য বিচ্ছুর গর্ত খোঁজে পাওয়া গেলে সেটার ভিতরেও ঢুকে পড়বে । কেননা মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের জন্য অনিষ্টতা এবং অকল্যাণ চলতে থাকবে। এক সময় রাজত্বও তাদের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। এভাবে চলার পর ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৯৯ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আব্বাছ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, যখন আমার আহলে বাইতের পঞ্চম পুরুষ মারা যাবে তখন মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, এভাবে সপ্তম পুরুষ পর্যন্ত চলবে, যা মাহদীর আগমন পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার কাছে শরীক থেকে সংবাদ পৌছে যে, তিনি বলেছেন, তিনি হচ্ছেন, ইবনুল আফার, অর্থাৎ হারুন। সেই ছিল পঞ্চম পুরুষ। আর আমরা বলব, সে হচ্ছে, সপ্তম পুরুষ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০০ | -
হযরত আবু হাসসান ইবেন নওবা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু আব্বাসের তিন জন রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক হওয়া অতি আবশ্যক। যাদের প্রথমজনের নাম হচ্ছে, আইন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০১ |
আবু ওয়াহাব আল-কালাঈ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আব্বাসী বংশের মধ্যে খেলাফতের দায়িত্ব ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে, যতক্ষণ না পশ্চিমারা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০২]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হারাস্তা নামক কোনো এলাকা যখন ধসে যাবে এবং আব্বাছের দুইজন খলীফাকে উৎখাত করা হবে আর আব্বাসীয় বংশের লোকজনের মাঝে ব্যাপকভাবে মতানৈক্য দেখা দিবে। একপর্যায়ে বারোটি বড় এবং বারোটি ছোট পতাকা উত্তোলন করা হবে তখন তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফেতনা জয়লাভ করতে থাকবে। ধীরে ধীরে রাজত্ত্ব তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং শামের বিরুদ্ধে বর্বর জাতির আবির্ভাব ঘটবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০৩ | -
হযরত আরতাত রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, বনু আব্বাছের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে যাওয়ার শেষ আলামত হচ্ছে, তিনজন বাদশাহ যারা ধারাবাহিক ভাবে ক্ষমতাসীন হবে, তাদের প্রত্যেকের নাম হবে একেক নবীর নামের মত। এদের পর আর আব্বাসীয় খেলাফত অবশিষ্ট থাকবেনা।
এদের হাতে খেলাফতে আব্বাছিয়া চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত বহাল থাকবে। যখন তুমি তাদের মাঝে এখতেলাফ দেখবে এবং বনু হাশেম একতাবদ্ধ হতে থাকবে। তারা উভয় নদীর কিনারায় জমায়েত হবে। বনু আব্বাসের এক লোকের হাতে পশ্চিমের কিছু এলাকা অবিশিষ্ট থাকবে। কালো ঝান্ডবাহীদের আগমন শামের পক্ষ থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি, তাদেরকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা। এসব হচ্ছে, আব্বাছীয় খেলাফত পতনের বিভিন্ন নিদর্শন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০৫]
হযরত শফি আল-আসবাহী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু আব্বাস থেকে এমন পাঁচ জন খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহন করবে, যাদের প্রত্যেকে হবে ভীষণ অত্যাচারী। তাদের কারণে জমিনে অবস্থান করা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। পঞ্চম খলীফা এভাবে মারা যাবে, জনৈক সিংহ তূল্য লোক তার উপর লাফিয়ে পড়বে, তাকে দাঁত দ্বারা চিবিয়ে মারবে। তার হাতে আসমান জমিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
যাদেরকে হত্যা করা হবে তাদের চিৎকার-শোরগোল আল্লাহ তাআলা পর্যন্ত পৌছবে। এভাবে সে মাত্র দুই-তিন দিন খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
এরপর তার ভাইয়ের থেকে একজন দায়িত্বভার গ্রহন করবে। এরপর আরেকজন গ্রহন করবে আসমান থেকে জনৈক ঘোষক ঘোষণা করবে, 'জমিন আল্লাহর জন্য এবং সকলে আল্লাহর বান্দা। সে হিসেবে আল্লাহর মালকে সকলের মাঝে বরাবর বন্টন করতে হবে। সেই বাদশাহ দীর্ঘ দশ বৎসর পর্যন্ত রাজত্ব করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০৬ ]
Comments 0