আব্বাসীয় খেলাফত ধ্বংসের কারন ও তুর্কীদের আত্নপ্রকাশ-কিতাবুল-ফিতান
আব্বাসীয় খেলাফত ধ্বংসের কারন ও তুর্কীদের আত্নপ্রকাশ-কিতাবুল-ফিতান
ওলীদ ইবনে মুসলিম বয়ান করতে গিয়ে বলেন, আমাদেরকে কুস্তুনতুনিয়ার দিকে প্রেরিত ওলীদ ইবনে ইয়াযিদের প্রতিনিধির কাছ থেকে যে শুনেছেন সে বর্ণনা করেন, তিনি ওলীদ ইবনে ইয়াযিদকে বলতে শুনেছেন। তোমাদের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ চলতে থাকবে এবং সেটা কালো পতাকাবাহীর আগমন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। অতঃপর তোমাদের বিরুদ্ধে তুর্কিদের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তোমাদের সাথে তাদের যুদ্ধ হলে তারা প্রতিপক্ষকে হত্যা করবে। এভাবে চলতে চলতে তোমাদের বাহনের চাদর শুকানোর পূর্বে পশ্চিমাদের আগমন ঘটবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০৭]
ওলীদ ইবনে মুসলিম রহঃ বয়ান করেন, তিনি বলেন, আমাকে এমন এক গোত্র বর্ণনা করেছেন, যারা আরমীনিয়া থেকে আগমন করে শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। এক পর্যায়ে তাদের সাথে আবু মুসলিমের স্বাক্ষাৎ হয়। তারা বলেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবনে আলীকে অপছন্দ করি, ফলে আমরা বয়কট করতে চাই। জবাবে তিনি বলেন, তোমরা ঠিকই করেছো। কালো ঝান্ডাবাহীদের বিজয় হতেই থাকবে তাদের অধীনস্থদের উপর। তাদের এই অভিযান তুর্কি সম্প্রদায় আরমেনিয়ার দোরগোড়াই উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত থাকবে। ওলীদ ইবনে মুসলিম বলেন, তাদের পরস্পর মত বিরোধ ও এখতেলাফের মাধ্যমে রাজত্বের পতন হওয়ার প্রথম লক্ষণ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০৮]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেন আমি এখন তুর্কিদের তৃণীরের আওয়াজ শুনছি। সেটা আল আগিল্লা ও বারিক এর মধ্যবর্তী স্থলে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬০৯ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুআবিয়া ইবেন আবু সুফিয়ান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে, যারা পর্বতে শীর্ষে ঘোড়া হাঁকায় তারা অতিসত্ত্বর শাম এবং জমিরায় গিয়ে পৌঁছবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১০ ]
হযরত আরতাত রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন দামেশ্বে কোনো একটি গ্রাম ধসে পড়বে, এবং তার মসজিদের পূর্ব সাইডের একটি অংশ ভেঙে যাবে। তখনই তুর্কি এবং রোমানরা একত্রিত হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং শাম দেশে তিনটি পতাকা উত্তোলন করা হবে, অতঃপর সুফিয়ানীর সাথে তাদের যুদ্ধ হবে।
এক পর্যায়ে তারা কারকীসিয়্যাহ এসে পৌঁছবে। ইসমত বলেন, আমাকে আবু হুকাইমা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমার এক বোন আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আমি শাম দেশে অবস্থান করছিলাম, অতঃপর বলা হলো, যারা পর্বতের শীর্ষে ঘোড়া হাঁকায়, অতি সত্ত্বর তারা শাম এবং জামিরার টীলার উপর অবস্থান করবে। তাদের মহিলাদেরকে বন্দি করা হবে। এমনকি কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর পায়ের নুপুর দেখতে পেলেও তার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১১ ]
হযরত কা'ব রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুর্কিবাহিনী জাযিরায় এসে ছাউনি ফেলবে। এক পর্যায়ে তাদের ঘোড়াকে ফুরাত নদী থেকে পানি পান করাবে, তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা মহামারী প্রেরণ করবে, যার কারণে অনেকে মারা যাবে। উক্ত মহামারী থেকে মাত্র একজন লোক মুক্তি পাবে।
ইবনু আইয়াশ রহঃ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবেন দীনার সংবাদ দিয়েছেন, কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা এসে আমাদ নামক এলাকায় অবস্থান করবে এবং দাজলা ও ফুরাত নদী থেকে পানি পান করবে। তারা জাযিরা দখল করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। তখন মুসলমানরা উক্ত জাযিরায় অবস্থান করবে। তারা তাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই পেরে উঠবেনা। তাদের উপর আল্লাহ তাআলা বরফ বর্ষণ করবেন। বরফের সাথে ছিল, ঠান্ডা বাতাস, আওয়াজ ও তুষারাপাত। যার কারণে তারা ঠান্ডায় নির্বাক হয়ে ফিরে যাওয়ার মনস্থ করবে।
তারা সহসা বলে উঠবে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং তাদের সাস্তির জন্য শত্রুই যথেষ্ট হবে। তাদের একজনও জীবিত থাকবেনা, এমনকি সর্বশেষ লোকটিও মারা যাবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬১২ ]
হযরত আরতাত রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ানী এবং তুর্কিদের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হবে, এরপর খলীফা মাহদীর হাতে তাদের মূলৎপাটন হবে। তিনিই হবেন মুদা নামক স্থানে প্রথম পতাকা স্থাপনকারী, যাকে তুর্কিদের দিকে প্রেরণ করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১৪ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আমর ইবনুল আস রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুদ্ধ- বিগ্রহ থেকে একটি মাত্র যুদ্ধ বাকি রয়েছে, আর সেটা হচ্ছে, জাযিরার অধিবাসিদের সাথে তুর্কিদের যুদ্ধ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৬১৫ ]
হযরত মাকহৃল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, তুর্কিরা মোট দুইবার আক্রমণ করবে, একবার আজারবায়জান নামক এলাকা বিরান ভূমিতে পরিনত করবে, দ্বিতীয়বার ফুরাত নদীর দুইকুলে আক্রমণ করবে। হযরত আব্দুর রহমান ইবেন ইয়াযিদ তার হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা তাদের ঘোড়াসমূহের মধ্যে মৃত্যু চাপিয়ে দিবেন। যার কারনে তারা চলে যেতে বাধ্য হবে। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে এমন ব্যাপক গনহত্যা চলবে, কোনো তুর্কিই আর অবশিষ্ট থাকবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১৬ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনু্ল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, যদি তোমরা প্রথমে কোনো তুর্কিকে জাযিরাতুল আরবে দেখতে পাও তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের হাতে পরাজিত না হবে, কিংবা আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে শাহাদাত নসীব করবেন কেননা, তারা হারাম শরীফকে অপবিত্র করবে, সেটাই হবে পশ্চিমাদের আত্মপ্রকাশ এবং তাদের রাজত্বের পতন হওয়ার লক্ষণ ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১৭ ]
হযরত মাকহৃল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, তুর্কিরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে আত্মপ্রকাশ করবে, একদল প্রকাশ হবে জাযিরা এলাকায়, যারা সুন্দরী নারীদেরকে বেঁধে রাখবে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে বিজয়ী করবেন, ফলে তাদেরকে গন হারে হত্যা করা হবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১৮ ]
হযরত আম্মার ইবেন ইয়াযির রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের নবীর পরিবারের জন্য কিছু নিদর্শন রয়েছে, সুতরাং তোমরা তোমাদের ভূখন্ডকে আকড়ে ধরবে। এক পর্যায়ে জনৈক তুর্কির আত্মপ্রকাশ হবে এক দুর্বল ব্যক্তির শপথের কারণে। অতঃপর দুই বৎসর পর তার বাইয়াত রহিত করে দেয়া হবে এবং তুর্কিরা রোমানদের বিপক্ষে শপথ পাঠ করাবে।
ইতোমধ্যে দামেস্কের মসজিদের পশ্চিম অংশ ধসে যাবে এবং শাম দেশে তিন ধরনের লোকের আবির্ভাব ঘটবে। যেখান থেকে তাদের রাজত্ব শুরু হয়েছে সেখানে গিয়ে ঠেকবে। তুর্কিদের আত্মপ্রকাশ জাযিরা থেকে হলেও রোমানরা কিন্তু ফিলিস্তিন থেকে ক্ষমতা লাভ করবে। জনৈক আব্দুল্লাহ আরেক আব্দুল্লাহকে ধাওয়া করবে এবং কারকীসিয়া নামক স্থানে তার সৈন্যবাহিনীর সাথে মোকাবেলা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬১৯ ]
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন তুর্কি এবং খারয বাহিনী জাযিরা ও আজারবায়জান নামক এলাকায় আত্মপ্রকাশ করবে, আর রোমানরা আমাক এবং তার আশেপাশের এলাকায় ক্ষমতা প্রদর্শন করবে তখন আহলে কানসারীনের কায়স বংশের এক লোককে জনৈক রোমী হত্যা করবে।
ঐ সময় সুফিয়ানী ইরাকে অবস্থান ককে পূর্বদিক থেকে আগত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। প্রতিটি প্রান্ত তখন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত থাকবে। এভাবে যুদ্ধ যখন দীর্ঘ চল্লিশ দিন পর্যন্ত চলবে এবং কোথাও থেকে সাহায্যও আসবেনা তখন রোমানরা এমর্মে সন্ধি করার প্রস্তাব পাঠাবে যে, উভয় দলের কেউ কাউকে কিছুই দিবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬২0 ]
হযরত আবু জাফর রহঃ কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, সুফিয়ানী যখন আবকা' ও মানসুর ইয়ামানীর উপর জয়লাভ করবে। অন্যদিকে তুর্কি ও রোমানবাহিনী এগিয়ে আসবে তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও সুফিয়ানী জয়ী হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৬২১ ]
Comments 0