খলিফাদের চেনার উপায়
খলিফাদের চেনার উপায়
হযরত আওয়াম ইবনে হাওশাব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রোম দেশে বনু আসাদের জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিনি তার গোত্রের এমন একজন থেকে বর্ণনা করেন যিনি ওমর রাযিঃ কে পেয়েছন। তিনি একদিন তার আসহাব অর্থাৎ, তালহা, যুবাইর, সালমান ও কাব রহঃ কে বললেন, আমি তোমাদেরকে এমন এক বিষয় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করব, যদি তোমরা এ ব্যাপারে আমাকে মিথ্যা বল, তাহলে আমি, তোমরা সকলে ধ্বংস হয়ে যাবো।
আমি তোমাদেরকে কসম দানের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করছি, আমার ব্যাপারে তোমাদের কিতাবে কি পেয়েছ, আমি খলীফা, নাকি বাদশাহ? জবাবে তালহা এবং যুবায়ের রহঃ বলেন, নিঃসন্দেহে আপনি আমাদেরকে এমন এক বিষয় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছেন, যেটা আমরা জানিনা, আমরা অতটুকু জানিনা যে, আপনি একজন খলীফা নাকি বাদশাহ। জবাবে হযরত ওমর রাযিঃ বললেন, যদি এটা বলে থাকো, তাহলে তুমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে গিয়ে কেনো বসে থাকতে।
অতঃপর হযরত সালমান রহঃ বলেন, নিঃসন্দেহে আপনি প্রজাদের প্রতি ইনসাফের আচরন করেন, সকলের মাঝে বরাবর বন্টন করেন, প্রত্যেক প্রজাকে আপনি নিজের পরিবারের সদস্যের ন্যায় ভালোবসেন। মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযিদ আরো বলেন, এবং আপনি কিতাবুল্লাহর বিধান মতে ফায়সালা করেন।
এপর্যায়ে কাব রহঃ বলেন, আমার ধারনা মতে এই মজলিসে বাদশাহ খলীফার পরিচয় সম্বন্ধে আমার চেয়ে কেউ বেশি জানেনা। তবে সালমানকে আল্লাহ তাআলা ইলম এবং হেকমত পুরোপুরি ভাবে দান করেছেন। অতঃপর কাব রহঃ বলেন, আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় আপনি খলীফা, বাদশাহ নন। একথা শুনে হযরত ওমর রাযিঃ তাকে বললেন, তুমি সেটা কী ভাবে জানতে পারলে? জবাবে হযরত কাব রাযিঃ বললেন, আপনার সম্বন্ধে আমি কিতাবুল্লাহতে পেয়েছি।
আতঃপর ওমর রাযিঃ বলেন, কিতাবুল্লাহতে কি আমার নাম উল্লেখ আছে? জবাবে হযরত কাব রহঃ বললেন, না, কিতাবুল্লাহতে আপনার নাম উল্লেখ না থাকলেও আপনার বৈশিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, প্রথমে নবুওয়ত হবে অতঃপর খেলাফত এবং রহমতে রুপান্তরিত হবে। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযিদ রহঃ বলেন, খেলাফত আলা মিনহাজিন্নু্যুওয়ত হবে। অতঃপর পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইকারী বাদশাহ রাষ্ট্র নায়ক হবে। বর্ননাকারী হুশাইম রহঃ আরো বলেন, জালেম এবং লড়াইকারী বাদশাহ ক্ষমতা গ্রহন করবে। এসব কথাশুনে হযরত ওমর রাযিঃ বলেন, সেসব কিছু আমার মাথার উপর দিকে অতিক্রম করলেও আমার আর আফসোস থাকবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪০]
হযরত মুগীস আল আওযাঈ রহঃ বর্ণনা করেন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযিঃ হযরত কাবকে ডেকে পাঠালে তিনি উপস্থিত হওয়ার পর তাকে বললেন, হে কাব! তুমি আমার কি বৈশিষ্ট পেয়েছ, জবাবে কাব রহঃ বলেন, একজন লৌহ মানব খলীফা, যিনি আল্লাহর বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে কাউকে ভয় করবেন না। তারপর এমন একজন খলীফা হবেন যাকে তার প্রজাগন খুবই নির্মম ভাবে হত্যা করবে। এরপর পর উক্ত উম্মতের উপর বিভিন্ন বালা মসিবত আসতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪২ ]
সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন খলীফা তিনজন এবং অন্য সকল বাদশাহ, ১. আবু বকর রা. ২. উমর রা. ৩. উসমান রা. তখন তাকে বলা হল, আমরা আবু বকর রা. এবং উমর রা. কে চিনি তবে দ্বিতীয় উমর রা. কে? তখন তিনি বললেন যদি তোমরা বেঁচে থাক, তাহলে তার সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ ঘটবে আর যদি তোমরা মৃত্যবরণ কর, তাহলে তোমাদের পরবর্তীতে তার আগমন ঘটবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪৩ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে নুআঈম আল মুআফরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কতিপয় শেখকে বলতে শুনেছি, যিনি সৎকাজের আদেশ করবেন এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবেন তিনিই হবেন জমিনের উপর আল্লাহর খলীফা, আল্লাহর কিতাবের খলীফা এবং আল্লাহর রাসূলের খলীফা
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪৫][মাকতু, সনদ ও মতন সবদিক থেকেই হাদিসটি দুর্বল]
হযরত আশআর ইবনে বুজাইর রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু মুহাম্মদ আন নাহদী রহঃ এরশাদ করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পর কোনো বাদশাহ হবেনা ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ২৪৬ ][মাকতু, যায়িফ; বর্ণনাকারী আশআর ইবনে বুজাইর অজ্ঞাত]
হযরত হাম্মাম রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একদা আহলে কিতাবের একজন লোক এসে হযরত ওমর রাযিঃ কে বললেন, আসসালামু আলাইকুম, হে আরবদের বাদশাহ! তার কথা শুনে হযরত ওমর রাযিঃ বললেন, তোমাদের কিতাবে কি এমনই পেয়েছ? তোমরা কি এমন পাওনি যে প্রথমে নবী, অতঃপর খলীফা, এরপর আমীরুল মুমিনীন, তারপর হবে বাদশাহ। জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪৭ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খেলাফত মদীনা থেকে পরিচালিত হলেও বাদশাহী হবে শাম দেশ থেকে পরিচালিত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪৮ ]
হযরত সাঈদ ইবনে জুমহান রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর খাদেম সাফীনা রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, দীর্ঘ ত্রিশ বৎসর পর্যন্ত আমার উম্মতের মধ্যে খলীফা থাকবে। বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযীদ রহঃ বলেন, ত্রিশ বৎসর হিসাব করলে দেখা যায়, সেটা হযরত আলী রাঃ এর খেলাফতের সর্বশেষ সময় পর্যন্ত অতঃপর তারা হযরত সাফীনা রাযিঃ কে বললেন, এরা তো মনে করে হযরত আলী খলীফা নন। জবাবে হযরত সাফীনা রাযিঃ বলেন, একথাটি একমাত্র মারাত্নক অপরাধীগনই বলে থাকে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৪৯ ]
হযরত ইয়াহ ইয়া ইবনে আবু আমর আস শায়বানী রহঃ বলেন, যারা মসজিদে হারাম এবং মসজিদে বায়তুল মোকাদ্দাসের মালিক হতে পারেনি তারা খলীফাও হতে পারবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৫০ ]
হযরত সাবাহ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু উমাইয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ভার গ্রহন করার পর আর খেলাফত থাকবেনা। এভাবে মাহদী আঃ এর আগমন পর্যন্ত চলতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৫১ ]
হযরত উতবা ইবনে গাযওয়ান আসসুলামী রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, খবরদার! এক সময় নবুওয়তের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর থেকে বাদশাহদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৫২ , সহিহ ইবনু হিব্বানঃ ৭২৭৬][মাওকুফ, সহিহ]
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে হযরত উসমান রাযিঃ এর পর থেকে বনু উমাইয়ার মোট বারোজন বাদশাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহন করবে। তাকে বলা হলো, খলীফা! জবাবে তিনি বললেন, না বরং বাদশাহ হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৫৩ ]
উতবা ইবনে গাযওয়ান সুলামী রাযিঃ থেকে বর্নিত, তিনি এরশাদ করেন, যখনই কোনো নবুওয়তের আবির্ভাব হয়েছে তখনই তার পরবর্তী বাদশাহর আবির্ভাব ঘটেছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ২৫৪ ]
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনার এই দায়িত্ব কী ভাবে আদায় করা হবে। জবাবে তিনি বললেন, তোমার গোত্রে যতক্ষন কল্যান থাকবে ততক্ষন সেই দায়িত্ব পালনের যোগ্য তারাই হবে।
আমি বললাম আরবের মাঝে সর্ব প্রথম কোন গোত্র ধ্বংস প্রাপ্ত হবে? জবাবে তিনি বললেন, তোমার গোত্র। আমি জানতে চাইলাম সেটা কিভাবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, মৃত্যু তাদেরকে গ্রাস করে নিবে। এবং মানুষ তাদের হয়ে বিরুদ্ধে হিংসাত্মক হয়ে উঠবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ২৫৭ ]
Comments 0