ফিতনাকালীন সময়ে আত্মরক্ষাই শ্রেয়-কিতাবুল কিতান
ফিতনাকালীন সময়ে আত্মরক্ষাই শ্রেয়-কিতাবুল কিতান
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, ফেত্নকালীন ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক শুয়ে থাকা ব্যক্তি থেকে উত্তম। শুয়ে থাকা ব্যক্তি বসা অবস্থায় থাকা লোক থেকে উত্তম। বসে থাকা লোক দাড়ানো অবস্থায় থাকা লোক থেকে ভালো, দাড়িয়ে থাকা লোক চলমান লোক থেকে উত্তম, স্বাভাবিক চলাচলকারী ব্যক্তি বাহনে আরোহনকারীর চাইতে উত্তম। বাহনে আরোহনকারী দ্রুত গতিতে ফেৎনার দিকে ধাবমান ব্যক্তি হতে উত্তম ।
ফেনা চলাকালীন খুন হওয়া সকলে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (সা.) সে অবস্থা কবে হবে? জবাবে আল্লাহ্র রাসূল বলেন, যেটা মারাত্মক যুদ্ধ চলাকালীন হবে। আমি জানতে চাইলাম কখন সেটা হবে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, সেটা তখনই হবে, যখন কোনো মানুষ তার পাশে বসে থাকা লোক দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে শঙ্কা মুক্ত হতে পারবেনা।
বর্ণনাকারী বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি সে যুগ প্রাপ্ত হই তাহলে আমার প্রতি আপনার কি নির্দেশনা রয়েছে। জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তখন তুমি নিজেকে এবং তোমার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করো এবং নিজের ঘরে দাখেল হয়ে যাও। অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (সা.) সেই ফেৎনা যদি আমার ঘরের অন্দরেও প্রবেশ করে যায় তাহলে আমার করনীয় কি হবে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তাহলে তুমি তোমার ঘরের ভিতরে ঢুকে যাবে।
তার কথা শুনে আমি বললাম, যদি সে ফেৎনা আমার ঘরের ভিতরেও প্রবেশ করে তাহলে আমার কি করা উচিৎ? এর পর রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যদি এমন হয় তাহলে তুমি তোমার মসজিদে প্রবেশ করতঃ তোমার হাত গুটিয়ে রাখ, এবং মৃত্যু মুখে পতিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ‘রব্বি আল্লাহ' জপতে থাক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪২] [মুসতাদরাকুল হাকেমঃ ৮৪০৪]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা নিজেদেরকে ফেৎনা থেকে বাচিয়ে রাখ। আল্লাহর কসম! যদি কেউ ফেৎনার সম্মুখিন হয় তাহলে সেটা তাকে স্রোতের ন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। উক্ত ফেৎনা খুবই সুন্দরভাবে এগিয়ে আসলেও সবকিছু নিঃশেষ করে ফিরে যাবে। তোমরা কেউ এ ধরনের ফেনার সম্মুখিন হলে তোমাদের ঘরের ভিতরেই অবস্থান করতে থাকবে, তোমাদের তালোয়ারের তীক্ষ্মতাকে নষ্ট করে ফেলবে এবং ধনুকের ছিলা কেটে টুকরো টুকরো করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪৩ ] [হিলইয়াতুল আউলিয়াঃ ৯৪৩]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, অতি নিকটবর্তী হওয়া ফেৎনার অনিষ্টতাকালীন আরবদের ধ্বংস অনিবার্য। নিজের হাতকে কন্ট্রোলকারী লোকই মূলতঃ সফলকাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪৪ ] [মুসান্নাফ আবনু আবি শায়বাঃ ৩৬৫৬২]
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে আমি এমন এক ফেত্না সম্বন্ধে জানি, যার পূর্বের নিদর্শনগুলো অতিসত্ত্বর প্রকাশ পেতে আরম্ভ করেছে। যার সাথে থাকবে উত্যক্তকারী দল, যেমন খোরগোশকে উত্যক্ত করে গর্ত থেকে বের করে আনা হয়, তেমনিভাবে লোকজনকে ফেনার প্রতি ধাবিত করা হবে।
আবার আমি উক্ত ফেৎনা থেকে মুক্তির উপায়ও জানি। উপস্থিত লোকজন জিজ্ঞাসা করেন, মুক্তির উপায় কি হতে পারে? জবাবে হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, আমার হাতকে কন্ট্রোল করে রাখব, এক পর্যায়ে আমাকে এসে হত্যাকারীরা হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪৫ ] [মুসতাদরাকুল হাকেমঃ ৮৫৬০]
হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুসলমানদের দুই দল থেকে কারো পরিচয় পেশ করার ক্ষেত্রে আমার কোনো ভয় সংকোচ নেই। তাদের উভয়দল থেকে যারা খুন হবে তাদের প্রত্যেকে জাহেলী যুগের ন্যায় মৃত্যুবরণ করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪৬ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে ফেৎনা খুবই সাজ সজ্জা ও আনন্দিত অবস্থায় আত্মপ্রকাশ করবে, তবে সেটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ফেরৎ যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪৮ ] [মুসান্নাফ আবনু আবি শায়বাঃ ৩৭০৪২]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামন রাযি. থেকে বর্ণিত, তাকে একজন লোক জিজ্ঞাসা করেন যে, যখন নামায আদায়কারীগণ পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে তখন আমাদের জন্য আপনার দিক নির্দেশনা কি হতে পারে। জবাবে তিনি বললেন, তখন তুমি তোমার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে রাখবে। কেউ এগিয়ে আসলে তাকে হাত দ্বারা নিষেধ করে দিবে। আর যদি কেউ আক্রমণ করতে চায় তাহলে তাকে বলবে, তুমি আমার গুনাহ এবং তোমার গুনাহ সহকারে ফিরে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫০]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, তোমরা যাবতীয় ফেৎনা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করবে, কেননা ফেৎনাকালীন বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার মত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫১]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, ফেনা মূলতঃ তিন প্রকারের লোককে গ্রাস করে নিবে। এক প্রকার হচ্ছে দ্রুতগামি বুদ্ধিমান, যিনি উচ্চতায় পৌছার নিয়ত করলেই তাকে তলোয়ার দ্বারা নিম্নমুখী করে নিবে। দ্বিতীয়তঃ খতীব সাহেবের মাধ্যমে, যার প্রতি যাবতীয় বিষয়ের দাবি করা হবে। তৃতীয়তঃ শরীফ লোক। অতঃপর প্রতিভাবান বুদ্ধিমান লোককে মারাত্মকভাবে আছড়ে ফেলা হবে এবং খতীব ও শরীফলোক তাদের উভয়জনকে উৎসাহিত করা হবে। এক পর্যায়ে তাদের আশ্বপাশ্ব প্লাবিত হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে যুদ্ধকারী দুইদল থেকে তোমরা বেঁচে থাক, কেননা, তারা উভয় দল ধীে ধীরে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫৩ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি উক্ত ফেৎনার সম্মুখিন হই, তাহলে আপনার পক্ষ আমার জন্য কি নির্দেশনা রয়েছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তখন তুমি মুসলমানদের জামাআত এবং তাদের ইমামকে আকড়িয়ে ধরো, একথা শুনে আমি জানতে চাইলাম, যদি তাদের ইমাম এবং জামাআত না থাকে তাহলে কি করবো, জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ঐসব দলকে পুরোপুরি বর্জন করো, যদিও সেটা গাছের শিকড় কামড়ে ধরার মাধ্যমে হোক। এমন পরিস্থিতেতে মৃত্যু এসে গেলেও সেটা ছাড়া যাবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫৪ ] [ সহিহ বুখারিঃ ৩৬০৬ ]
বিনতে আহবান আল-গিফারী রহ. থেকে বর্ণিত, একদিন হযরত আলী ইবেন আবী তালেব রাযি. আহবানের কাছে এসে বললেন, আমার অনুসরণ করতে তোমাকে কে নিষেধ করেছে, জবাবে তিনি বলেন, আমাকে আমার খলীল এবং আপনার চাচাতো ভাই ওসিয়াত করেছেন, অতি সত্ত্বর ফেনা, দলাদলি এবং এখতেলাফ আত্ম প্রকাশ করবে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তুমি তোমার তলোয়ারকে ভেঙ্গে ফেলো, তোমার ঘরের অন্দরে প্রবেশ করবে এবং বাঁশের তৈরি একটি তলোয়ার আবিস্কার করো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৩৫৮ ] -
হযরত আবু জনাব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আমি হযরত তালহা রাযি. কে বলতে শুনেছি, তীব্র এক যুদ্ধে আমাকে শরীক হতে হয়েছে, যেখানে আমি কোনো তীরও নিক্ষেপ করিনি আবার কাউকে তলোয়ার দ্বারা আঘাতও করিনি। আমার যদি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত কাটা হতো এবং আমি শরিক না হতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হতো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫৯ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত হোযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, হে আমের! যাকে তুমি দেখো, সে যেন তোমাকে ধোকায় ফেলে না দেয়। কেননা এরা একদিন তাদের দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে আসবে যেমন মহিলাদের পেট থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসে। যখন তুমি এমন অবস্থা দেখতে পাবে তখন বর্তমানের অবস্থায় ফিরে যাওয়া ভালো হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৩ ]
ইবেন তাউয তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. আবু যরকে এরশাদ করেন, হে আবুযর! তোমাকে তো দেখতে তায়েফ বা রাশি বিদ্যায় পারদর্শি মনে হয়। তারা যখন তোমাকে মদীনা থেকে বের করে দিবে তখন তোমার কি অবস্থা হবে। জবাবে আবু যর বললেন, তখন আমি মকাদ্দাস স্থানে চলে আসব।
তারা যদি সেখান থেকেও বের করে দেয় তাহলে কি করবে জবাবে আবু যর বললেন তাহলে আমি আবার মদীনায় ফিরে আসব। রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, তারা যদি তোমাকে সেখান থেকেও বের করে দেয়। জবাবে আবু যর রাযি. বলেন, তখন আমি আমার তলোয়ার বের করে মারা না যাওয়া পর্যন্ত দুশমনের উপর আক্রমণ করতে থাকবো।
একথা শুনার পর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না তুমি এটা করতে যেওনা, বরং তখন যে আমীর থাকবে সে নিগ্রো গোলাম কালো হলেও তার কথা শুনে যাবে। বর্ণনকারী বলেন, আবু যর গিফারী রাযি. রাবাযা নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে হযরত ওসমান রাযি. এর কালো একজন গোলাম কে দেখতে পায়, এবং নামাযের একামত হওয়ার পর সকলে নামাযের অপেক্ষায় আছেন। তারা আবু যর রাযি. কে দেখে নামাযের ইমামতি করতে বললে তিনি জবাব দিলেন, না আমি ইমাম হবোনা, কেননা আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি কথা মেনে চলি, যদিও সে কালো নিগ্রো গোলাম হোক। অতঃপর উক্ত গোলাম এগিয়ে গিয়ে নামায সম্পন্ন করলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৪ ]
হযরত কা'ব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, আরবদের বর্তমান পরিস্থিতি রাসূলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পর মাত্র পঁচিশ বৎসর পর্যন্ত স্থায়ী হবে। অতঃপর এমন ফেৎনা দেখা দিবে যা যুদ্ধ বিগ্রহ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। এমন অবস্থা শুরু হলে তুমি নিজেকে এবং নিজের অস্ত্র হাত নিয়ন্ত্রণ করো। যেন তোমার কাছে শত্রু মিত্র পরিস্কার হয়ে যায়।
এরপর লোকজন পিলারের ন্যায় দাড়িয়ে থাকবে। অতঃপর মারাত্মক ফেৎনার সৃষ্টি হবে। আমি এ কথাটি কিতাবুল্লাহর মধ্যে পেয়েছি । এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকাশ যার কারণে কিছুই বুঝা যাবে না যা বড়দেরকেও গ্রাস করে নিবে। তখন তুমি তোমার অস্ত্র-হাতিয়ার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে রাখবে এবং সে এলাকা থেকে ভালোভাবে পলায়ন করবে। পলায়ন করতে গিয়ে যদি প্রবেশ করার মত বিচ্ছুর গর্ত পাও তাহলে সেখানে প্রবেশ করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৫ ]
হযরত কা'ব রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর ওফাতের পর মাত্র পঁচিশ বৎসর পর্যন্ত আরবদের প্রভাব বাকি থাকবে। অতঃপর ফেৎনার আগুন জ্বলতে থাকবে। যার মধ্যে হত্যাসহ সবধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। এহেন মুহূর্ত এসেপড়লে তুমি তোমার হাত ও হাতিয়ারকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এরপর অল্প সময়ের জন্য ফেৎনার প্রভাব বন্ধ হওয়ার পর আবারো নতুনরূপে ফেৎনা চলতে থাকবে। তখনো তুমি নিজের অস্ত্র ও হাতকে সংযত করবে। যেহেতু উক্ত ফেতনার ঘটনা আমি কিতাবুল্লাহ তে প্রাপ্ত হয়েছি। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেতনা এমন অন্ধকারচ্ছন্ন হবে যা প্রত্যেক বড় লোককে গ্রাস করবে। তাই কেউ মুক্তি পেতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৬ ]
হযরত ইয়াহইয়া ইবেন আবু আমর আস্ সিবয়ানী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন এবং তিনি চতুর্থ নং ফেৎনার কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, উক্ত ফেৎনা থেকে কেউ মুক্তি পাবে না, তবে কেবলমাত্র ঐ লোকের মুক্তির ব্যাপারে আশা করা যায়, যে উত্তাল সমুদ্রে ডুবন্ত ব্যক্তির দোয়ার ন্যায় মুক্তির জন্য দোয়া করবে।
সে সময় সর্বোত্তম ব্যক্তি হবে ঐ লোক যিনি গোপনে তাকওয়ার উপর অটল থাকে, প্রকাশ্যে তাকে কেউ চিনতে পারেনা এবং কোনো মজলিস থেকে উঠে গেলে তার অনুপস্থিতি অনুভব করা হয়না। ফেৎনাকালীন নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হচ্ছে, তীব্রভাবে বক্তব্য প্রদানকারী খতীব কিংবা নির্দিষ্ট কোনো স্থানে যাতায়াতকারী সওয়ারী।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৭ ]
হযরত আবু ওবাইদ ইবনে আবু জাফর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, পৃথিবীতে ফেৎনা চলতে থাকলে তার থেকে কেউ মুক্তি পাবে না তবে ঐ লোক মুক্তি পেতে পারে যে তার সম্পদ দ্বারা আক্রান্ত হবেনা, আর কেউ যদি তার সম্পদ দ্বারা আক্রান্ত হয়, তবে সেটা হবে কাউকে হত্যা করার মত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৮ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, ফেতনাকালীন সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছে ঐ লোক, যে নিজেকে সর্বদা গোপন করে রাখেন, তিনি জনসমক্ষে আসলে কেউ তাকে চিনতে পারেনা, কোথাও কোনো মজলিসে বসার পর ওঠে গেলে তার অনুপস্থিতি বুঝা যায় না এবং কেউ তাকে তালাশও করেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬৯ ]
হযরত আরতাত ইবনে মুনযির রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, চতুর্থ ফেৎনাকালীন লোকজন দ্রুত ভাবে ফেৎনার প্রতি ধাবিত হতে থাকবে। সে সময় খাটি মুমিন হবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের ঘরের ভিতর অবস্থান গ্রহণ করবে আর কাফের হয়ে যাবে ঐ লোক যে তার তলোয়ারকে খাপযুক্ত করবে এবং তার ভাই ও তার প্রতিবেশিকে হত্যা করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭০]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ওকবা ইবেন আমের রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক না করে এবং অবৈধ ভাবে কাউকে হত্যা না করে মৃত্যুবরন করে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭১ ] [ মুসনাদে আহমাদঃ ১৭০১০ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঐ লোক থেকে মারাত্মক কোনো লোকের সাথে শত্রু হিসেবে আমার সাথে কিয়ামতের দিন স্বাক্ষাৎ হবে না যে লোক এমনভাবে আসবে, তার রগ থেকে রক্ত প্রবাহিত থাকবে এবং আমাকে ইনসাফের দাড়ি পাল্লার সামনে আটকে দিয়ে বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আপনার বান্দাকে জিজ্ঞাসা করেন, যে আমাকে কেন হত্যা করেছে, তার কথা শুনে আমি বলবো, হে আল্লাহ! এই লোক মিথ্যা বলছে, তবে আমি একথা বলার সাহস রাখবোনা যে ঐ লোক তখন কাফের ছিল। যেহেতু আমি এভাবে বললে হয়তো আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি কি আমার বান্দা সম্বন্ধে আমার চেয়ে বেশি জানো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭২ ]
হযরত জুনদুব ইবেন আব্দুল্লাহ রাযি-হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদের থেকে একজন লোক আল্লাহ তা'আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে, তার হাতে থাকবে আরেকজন লোকের রক্ত। যে লোক “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে। যেহেতু যে লোক ফজরের নামায আদায় করবে সে আল্লাহ্র জিম্মাদারীতে থাকবে। কাউকে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করলে তাকে উপুড় করে নিক্ষেপ করেন। যখন সেখানে পূর্বের-পরের সবাইকে জমা করবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭৩ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আশতাব আলী রাযি. এর সাথে স্বাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রথমে তাকে বাধা দেয়া হলেও পরে অনুমতি দেয়া হয়। যেখানে পৌঁছে তিনি তালহার এক ছেলেকে দেখতে পায়। তিনি বললেন, আমার মনে হয় আপনি এর কারণে প্রথমে আমাকে প্রবেশ করতে দেননি। জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ, আমি বললাম, যদি সেই ওসমানের ছেলে হয় তাহলেও কি বাঁধা দিবেন? জবাবে তিনি বললেন হ্যাঁ। তার কথা শুনে আমি বললাম, আমার একান্ত ইচ্ছা, আমি এবং ওসমান ঐসব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবো; যাদের ব্যাপারে আল্লাহতাআলা এরশাদ করেছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭৪ ]
হযরত যুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ আল-বাজালী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ এবং তার ও জান্নাতের মাঝে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। বিশেষ করে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত দেখার পর অথচ কোনো মুসলমানকে হত্যা করার কারনে তার রক্ত হাত রক্তে রঞ্জিত।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৩৭৫] [মুজামুল কাবিরঃ ১৬৬০ ]
বকর ইবেন আব্দুল্লাহ আল-মুনী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবাদের একজন আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, তাকে বলতে শুনেছি, জান্নাতের দরজার প্রতি দৃষ্টিপাত করার পর কোনো মুসলমানকে হত্যা করার কারনে তার মাঝে এবং জান্নাতের মাঝে যেন অন্তরায় সৃষ্টি না হয়ে যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭৬ ] [ মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাকঃ ১৪৬৪৯ ]
হযরত ইউনূস ইবেন যুবায়ের রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুনদুব ইবেন আব্দুল্লাহ রাযি. কে বলতে শুনেছি, যখন বালা-মসিবত অবতীর্ণ হতে থাকবে তখন তুমি তোমার সম্পদের দিকে এগিয়ে যাও, তোমার দ্বীনের দিকে নয়।
কেননা, যে লোকের দ্বীন নষ্ট হয়ে যাবে তার সবকিছুই যেন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। এবং যার ঈমান ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাকেই যেন প্রকৃত পক্ষে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যেনে রাখো, জাহান্নামের পর কোনো ধনাঢ্যতা বাকি থাকবেনা এবং জান্নাতের পরবর্তী সময়ে আর গরীব বাকি থাকবেনা। নিঃসন্দেহে জাহান্নাম তার বন্দীকে মুক্তি দিতে পারবেনা এবং তার ফকীরকে অমুখাপেক্ষীও করতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭৭ ] [ মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবাঃ ৩৪৪৮৪ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবেন আলী রহ. থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আলী ইবেন আবু তালেব রাযি. কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, হে আল্লাহ! ওসমান ইবনে আফফানের হত্যকারীদেরকে আপনি উপুড় করে আজকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করুন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭৮ ]
হযরত আবু বারযাহ আল-আসলামী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় বর্তমানে যিনি শাম দেশে রয়েছেন, (অর্থাৎ মারওয়ান) আল্লাহর কসম! যে একমাত্র দুনিয়াতে যুদ্ধে করবে, তেমনিভাবে যিনি মক্কাতে রয়েছে (অর্থাৎ, ইবনে যুবাইর রাযি.) আল্লাহর কসম! তিনি যুদ্ধ করলে একমাত্র দুনিয়াতে যুদ্ধ করবেন।
যাদেরকে তোমরা কারী বলে আহবান করবে তারা যুদ্ধ করলে দুনিয়াতেই যুদ্ধ করবে। এই হাদীস বর্ণনা করলে তার ছেলে তাকে বলেন, এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে আমাদের করনীয় কি হবে? জবাবে তিনি বলেন, তখন সর্বোত্তম লোক হবে ঐ দল । যারা অভাবী হবে এবং তাদের হাত হবে মানুষের সম্পদ থেকে মুক্ত এবং তাদের যাবতীয় সবকিছু খুবই হালকা প্রকৃতির হবে; তারা কাউকে হত্যাকারী হবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭৯ ] [ মুসতাদরাকুল হাকেমঃ ৮৫৫৬ ]
Comments 0