ফিতনাকালীন সময়ে আত্মরক্ষাই শ্রেয়-২য় পর্ব
ফিতনাকালীন সময়ে আত্মরক্ষাই শ্রেয়-২য় পর্ব
উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালমা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, কিছুদিনের মধ্যে তোমাদের উপর এমন কতক ইমাম নিযুক্ত হবে যাদের কার্যক্রম তোমরা পছন্দ করলেও অনেক কিছু অপছন্দ করবে। যারা তাদের কার্যক্রমের বিরোধীতা করবে মুক্তি পাবে, যারা অপছন্দ করবে তারা নিরাপদে থাকবে। তবে যারা রাজী থাকবে এবং অনুসরণ করবে তাদের জন্য রয়েছে বিপরীত সিদ্ধান্ত। একথা শুনার পর তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি তাদেরকে হত্যা করবোনা কিংবা তাদের সাথে মোকাবেলা করবো না? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, না যতদিন পর্যন্ত তারা নামায আদায় করবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে মোকাবেলা করা যাবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮০]
হযরত হাসান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কে বলা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ তাদেরকে কি আমরা হত্যা করবোনা? জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, না, তারা যতদিন নামায আদায় করবে তাদের সাথে মোকাবেলা করা যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮১]
হযরত আউফ ইবনে মালেকের চাচার ছেলে মুসলিম ইবেন কুরযা রহ. থেকে বর্ণিত তিনি হযরত আউফ ইবনে মালেককে বলতে শুনেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছেন, তোমাদের ইমামদের নিকৃষ্টতম ইমাম হচ্ছে, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ করবে এবং তারাও তোমাদেরকে অপছন্দ করবে। আর তাদেরকে তোমরা লা'নত করবে এবং তারাও তোমাদেরকে লা'নত করবে।
একথা শুনে আমরা বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে কি তাদের সাথে আমরা মোকাবেলা করবোনা, জবাবে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নামায কায়েম করবেন, ততদিন তাদের সাথে মোকাবেলা করা যাবেনা। খবরদার! কাউকে যদি কোনো যিম্মাদার নিযুক্ত করা হয় এবং তাকে, কোনো গুনাহের কাজ করতে দেখা যায় তাহলে তিনি যা যা গুনাহের কাজ করতে থাকবে সেগুলোর বিরোধীতা করবে। তবে তার উপর থেকে আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেয়া যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৩৮২] [ মুজামুল কাবিরঃ ১৪৫৬৬ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তোমাদের ওপর পূনরায় বালা-মসিবত নাযিল হওয়ার পূর্বে তোমরা ধৈর্য্যধারন করবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে আমরা যে ধরনের বালা-মসিবতের সম্মুখিন হয়েছিলাম তোমরা এর চেয়ে কঠিন মসিবতের সম্মুখিন হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৩ ]
বিশিষ্ট সাহাবী আবু যরগিফারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেন, হে আবু যর! তোমার অবস্থা কেমন হবে, যখন মানুষ এত বেশি ক্ষুধার্ত হবে, যার কারণে তুমি তোমার বিছানা থেকে দাড়িয়ে তোমার মসজিদে যেতে পারবেনা এবং তোমার মসজিদ থেকে তোমার বিছানার দিকে যেতে পারবে না।
জবাবে আমি বললাম, এসব ব্যাপারে আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভালো বলতে পারবেন। আমার কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি যেখান থেকে এসেছ সেখানে চলে যাবে। আবুযর গিফারী বললেন, অতঃপর আমি বললাম, তারা যদি আমাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন, তাহলে কি করব, জবাবে তিনি বলেন, তখন তুমি তোমার ঘরে প্রবেশ করবে।
আমি বললাম, তারা আমাকে মেনে না নিলে কি করনীয়? জবাবে তিনি বলেন, যদি তাদের তলোয়ারের আঘাতে তোমাকে হত্যা করার আশঙ্কা বোধ করো তাহলে তোমার চাদরের একটি অংশ দ্বারা তোমার চেহারা ঢেকে রাখবে। আর তোমার হত্যাকারী তার এবং তোমার গুনাহ নিয়ে চলে যাবে। আল্লাহর রাসূল সা. এর কথা শুনে আমি বললাম, এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে কি আমি হাতিয়ার ধারন করবোনা? জবাবে তিনি বললেন, যদি এমন করো তাহলে তুমি তাদের শরীক হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৪ ] [ সহিহ ইবনু হিব্বানঃ ৬০৮৬ ]
হযরত আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাযি. এর অবরুদ্ধ হওয়ার দিন হযরত হোসাইন ইবনে আলী রাযি. তার কাছে গিয়ে বললেন, ইয়া আমীরুল মুমিনীন! আমি আপনার হাতের অনুগত ব্যক্তি। আপনার যা ইচ্ছা আমাকে নির্দেশ করুন। জবাবে তাকে ওসমান রাযি. বললেন, হে আমার ভাতিজা! আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত তুমি তোমার ঘরেই অবস্থান করো। আমার জন্য অযথা রক্তপাত করার কোনো প্রয়োজন নেই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৫ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মাসউদ আল-আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার আমীরগণ আমাকে এখতিয়ার দিচ্ছিলেন, যেন আমি আমার চেহারা বিবর্ণ হওয়া, চোখ-মুখ ধুলায়িত হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকবো, কিংবা তলোয়ার ধারন করতঃ যুদ্ধ করতে করতে মারা গিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করব। তবে আমি আমার চেহারা বিবর্ণ হওয়া এবং নাক-মুখ ধূলায়িত হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকাকে গ্রহণ করলাম এবং তলোয়ার হস্তে ধারন করতঃ যুদ্ধে করতে করতে মারা গিয়ে জাহান্নামে যাওয়াকে বর্জন করলাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৬ ]
হযরত আমের ইবনে মুতারিফ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে হোজাইফা বললেন, হে আমের! লোকজনকে ব্যাপকভাবে মসজিদে যাওয়া দেখে তুমি ধোকায় পড়োনা। কেননা সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন নারীগণ বাচ্চা প্রসবের ন্যায় তারাও দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। যখন এমন অবস্থা দেখবে তখন তোমরা বর্তমানে যেমন অবস্থায় রয়েছ তখনও সে অবস্থায় ফিরে যাওয়া জরুরী।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৭ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খবরদার! নিঃসন্দেহে আমর বিলমারূফ এবং নাহী আনিল মুনকার খুবই উত্তম একটি কাজ। এটা কোনো সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, তোমার ইমামের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৮ ] [ মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবাঃ ৩৬৯২১ ]
হযরত সুআইদ ইবনে গফলা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে হযরত ওমর রাযি. বলেছেন, হয়তো তুমি যাবতীয় ফেৎনার সম্মুখিন হবে, তখন আমীরের কথা শুনবে এবং আনুগত্য করবে। যদিও তোমাদের উপর কোনো নিগ্রো গোলামকে আমীর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সে যদি তোমাকে প্রহার করে তাহলে ধৈর্য্য ধারন করো, কিংবা যদি তোমাকে বঞ্চিত করে অথবা তোমার উপর জুলুম করে তাহলেও সবুর করো। যদি সে দ্বীনি কোনো বিষয়ে তোমার কাছ থেকে কেসাস নিতে চায় তাহলে বলো, আমি সর্বাগ্রে তোমার অনুকরন করবো। প্রয়োজনে আমার রক্ত প্রবাহিত করবো, তবে দ্বীনের উপর যেন কোনো আঘাত না আসে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮৯ ] [সুনানুল কুবরাঃ ১৫২৯০ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন সালাম রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি ওসমান ইবেন। আফফানের ব্যাপারে লোকজনের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে বলেন, হে লোক সকল! তোমরা ওসমান ইবনে আফফানকে হত্যা করোনা। কসম সেই সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! কোনো উম্মত তাদের নবীকে হত্যা করলে আল্লাহ তাআলা তাদের সত্ত্বর হাজার লোককে হত্যা করার ব্যবস্থা করেন। আর যদি কোনো উম্মত তাদের খলীফাকে হত্যা করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার বিপরীতে চল্লিশ হাজার লোককে হত্যার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯০]
প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ওসমান ইবনে আফফানের সাথে তার অবরুদ্ধ ঘরে অবস্থান করছিলাম। একপর্যায়ে আমাদের এক লোককে হত্যা করা হলে আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! হত্যাকারীরা খুবই ভালো, তারা কেবল আমাদের এক লোককে হত্যা করেছে।
আমার কথা শুনে তিনি বলেন, আমি তোমার কাছ থেকে আশা করছি, যখন তুমি তোমার তলোয়ারকে নিক্ষেপ করবে তখন সেটা যেন আমার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে। যেহেতু আজকে মুসলমানরা আমাকে হত্যা করার মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণ করবে। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, একথা শুনার সাথে সাথে আমি আমার তলোয়ারকে এমনভাবে নিক্ষেপ করে দিয়েছি, সেটা কোথায় গিয়ে পড়েছে আমিও জানিনা ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯১ ]
হযরত হোসাইন আল-হারেছী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, একদিন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত যায়েদ ইবেন আরকাম রাযি. হযরত আলী রাযি. কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আলী! আমি তোমাকে আল্লাহর নামে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, ওসমান ইবনে আফফানকে কি তুমিই হত্যা করেছ? বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আলী রাযি. কিছুক্ষণ মাথা নিচের দিকে করে রাখে, অতঃপর বলে উঠে, কসম সে সত্ত্বার যিনি দানা থেকে গাছ উৎপাদন করেন এবং দেহে প্রাণের সঞ্চার করেন, আমি ওসমানকে হত্যা করিনি এবং তাকে হত্যার নির্দেশও দিইনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯২]
হযরত মুহাম্মদ ইবেন সীরিন রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত কা'ব রহ আমীরুল মুমিনীন হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাযি এর অবরুদ্ধ অবস্থায় তাকে বলে পাঠালেন যে, নিঃসন্দেহে আজকে সকল মুসলমানের উপর আপনার হক্ব, সন্তানের উপর পিতার হকের ন্যায়। নিঃসন্দেহে আপনাকে হত্যা করা হবে, সুতরাং আপনার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করুন। কেননা, এটা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট আপনার জন্য শক্তিশালী দলীল হবে।
উক্ত সংবাদ হযরত ওসমান ইবেন আফফান রাযি. এর কাছে পৌঁছার পর তিনি তার সাথীদেরকে বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাদের উপর আমার একান্ত হক্ব রয়েছে তারা যেন আমার পক্ষে যুদ্ধে বের না হয়। হযরত ওসমান রাযি. এর বক্তব্য শুনার পর মারওয়ান ইবেন হাকাম, খুবই রাগান্বিত হয়ে তার হাতে থাকা তলোয়ারটি এতো জোরে নিক্ষেপ করেন যার আঘাতে পার্শ্বে থাকা দেয়াল কেটে যায়। মুগীরা ইবনুল আখনাছ বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি শত্রুর সাথে মোকাবেলা করব, ফলে সে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং মৃত্যুবরণ করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৩ ]
হযরত জারীর ইবনে হায্যে রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুমাইদ ইবেন হেলাল আদাবী রহ. কে বলতে শুনেছি, আমাদের একজন স্বপ্নে হযরত ওসমান রাযি. কে দেখতে পেলেন, তার চেহারা-সুরত পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। তার পরনে সাদা কাপড় ছিল। তাঁকে আমি বললাম হে আমীরুল মুমিনীন! কোন বিষয়কে আপনি অধিক শক্তিশালী বস্তু হিসেবে পেয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন, এমন এক দ্বীন যার মধ্যে কোনো ধরনের মারামরি-হানাহানি নেই। কথাটি তিনবার বললেন।
কিছুদিন পর যখন উষ্ট্রি যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখন আমি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তীর-তুনীর, বর্শা ইত্যাদি নিয়ে আমার ঘোড়ায় আরোহন করি। অবশ্যই আমি ছিলাম ক্ষুদ্র একটি দলের অন্তর্ভুক্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে হঠাৎ আমার সেই স্বপ্ন মনে পড়ে যায়। তখন আমি ভাবলাম, হে অমুক! তোমাকে কি ওসমান ইবেন আফফান এ কথা বলেনি! সাথে সাথে আমি আমার ঘোড়ার মুখ বাড়ির দিকে ফিরিয়ে নিলাম, অস্ত্রসস্ত্র খুলে ফেললাম এবং ঘরেই বসে থাকলাম । একপর্যায়ে যুদ্ধকালীন অবস্থা শেষ হয়ে যায়। এই সময় আমি আমার ঘর থেকেও বের হয়নি ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৪ ]
হযরত জাবের ইবেন যায়েদ আল-আযদী রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাযি. কে বলতে শুনেছি, আমি ওসমান ইবেন আফফানকে হত্যার নির্দেশ দিইনি এবং সেটাকে পছন্দও করিনা। অথচ আমার চাচাতো ভাইগণ আমার প্রতি অপবাদ দিচ্ছেন। এব্যাপারে আমি বারবার ক্ষমা চাইলেও তারা ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানায়! তারা ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানায়!! যার কারণে আমি চুপ হয়ে যাই ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৫ ]
হযরত আলী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আজকে ওসমান ইবেন আফফানের হত্যা আমাকে বড় লজ্জায় ফেলে দিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৬ ]
হযরত হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইবেন মাসলামা এরশাদ করেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সা. একটি তলোয়ার দিয়ে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মুশরিকরা তোমার সাথে মোকাবেলা করে তুমিও তাদের সাথে মোকাবেলা করতে থাকবে। আর যখন আমার উম্মতের একদলকে অন্য দলের সাথে মোকাবিলা করতে দেখবে তখন তোমার তলোয়ারকে কোথাও এমনভাবে আঘাত করবে যেন সেটা ভেঙ্গে যায়। অতঃপর তুমি তোমার ঘরে এসে অবস্থান গ্রহণ করবে। তোমার উপর ভুলক্রমে কারো আক্রমণ এসে পড়া কিংবা অকাট্য মৃত্যুর মুখে পতিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। তিনি সেভাবে করলেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৭ ]
হযরত আবু বুরদাহ ইবেন আবু মুসা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাবায়া নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবেন মাসলামার কাছে গিয়ে বললাম, আপনি লোকজনের নিকট উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কিছু উপদেশ দিবেননা, যেহেতু লোকজন এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাচ্ছে।
জবাবে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, নিঃসন্দেহে কিছু ফেনা এবং দলের আত্মপ্রকাশ হবে। তখন তুমি তোমার তলোয়ারের ধারকে নষ্ট করে ফেলবে, তোমার কামানকে ভেঙে চুরমার করবে, এবং সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তোমার ঘরের ভিতর অবস্থান গ্রহণ করবে। বর্তমানে আমি যে কাজই করছি সে কাজের ব্যাপারে আমি নির্দেশ প্রাপ্ত হয়েছি।
আমরা তাবুর খুটির সাথে লটকানো একটি তলোয়ার দেখতে পেলাম, যখন তলোয়ারটি নামিয়ে খাঁপযুক্ত করা হলো, দেখলাম সেটা লোহার তলোয়ার নয় বাঁশের তৈরি তলোয়ার। তিনি আমাদেরকে উক্ত তলোয়ার দেখিয়ে বললেন, তলোয়ারটির সাথে আমি যেই আচরণই করেছি সে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এটাকে এভাবে রেখে দেয়ার কারণ হচ্ছে, লোকজনকে সাময়িকভাবে ভয় দেখানো।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৮ ]
হযরত আবু ওসমান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, হে খালেদ ইবনে আরফাজাহ“ ! অতিসত্ত্বর মানুষের মাঝে বিভিন্ন ধরনের ফেৎনা, এখতেলাফ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। এহেন পরিস্থিতিতে যদি হত্যাকারী না হয়ে মাকতূল হওয়া সম্ভব হয় তাহলে তুমি তাই হও। হত্যাকারী হয়োনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯৯ ] [ মুসতাদরাকুল হাকিমঃ ৫১৯৬ ]
হযরত আবু জাফর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে ওসামা ইবেন যায়েদের গোলাম হারমালা বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, আমাকে ওসামা ইবেন যায়েদ একদিন হযরত আলী রাযি. এর নিকট প্রেরণ করে বললেন, আমি যেন তার কাছে গিয়ে বলি, আপনার সাথীকে কি কারণে পিছনে ফেলে রাখা হয়েছে? যেন তাকে আরো বলি, তিনি আপনাকে বলেছেন, আল্লাহর কসম! যদি আমি সিংহের চওড়া চোয়ালের মাঝখানে অবস্থান করি তাহলেও আমি আপনার সাথে থাকা পছন্দ করব। তবে আমি এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত নই। হারমালাহ বলেন, আমি উক্ত বার্তা নিয়ে হযরত আলী রাযি. এর কাছে আসলে তিনি এসব কথা শুনে কিছুই প্রদান করেননি।
হারমালা বলেন, অতঃপর আমি হাসান, হোসাইন এবং ইবনে জাফর রাযি. এর কাছে আসলে তারা আমার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করেন। বর্ণনাকারী আমর ইবেন দিয়ার রহ. বলেন, আমি হারমালা কে দেখলেও তার মুখ থেকে এই হাদীস শুনিনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪০১ ]
হযরত ওমর ইবনে সাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা সা'দের কাছে উপস্থিত হন, যিনি তখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে আকীক নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তার কাছে গিয়ে বললেন, হে আমার পিতা! আপনি ছাড়া আহলে শুরা ও বদরী সাহাবাদের কেউ এখন আর জীবিত নেই। বর্তমানে যদি আপনি নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে লোকজনের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাহলে আপনার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেউ দ্বিমত পোষণ করবেনা।
জবাবে তিনি বলেন হে আমার আদরের সন্তান! তুমি কি এজন্য আমার কাছে এসেছো! আমি বসে থাকবো, যতক্ষণ না নগন্য লোকজন বাকি থাকবে। অতঃপর আমি বের হয়ে কি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার উপর তলোয়ার দ্বারা আক্রমণ করবো। মনে রেখো, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, উত্তম রিযিক হচ্ছে, যা প্রয়োজন মত হবে এবং উত্তম যিকির হচ্ছে, নিম্ন স্বরে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪০২]
হযরত সুলায়মান ইবেন আব্দুল মালিক রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে জনৈক ইয়ামানী বলেছেন, তিনি এরশাদ করেন, আমি হযরত সা'দ ইবেন মালেক রাযি. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি একজন মক্কাবাসি ছিলাম, সেখানেই আমার জন্মস্থান, বাড়ি এবং সম্পদ রয়েছে। আমি মক্কাতেই অবস্থান অবস্থান করেছিলাম, এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সা. কে প্রেরন করেন আমি তার উপর ঈমান গ্রহন করে তার অনুগত হয়ে গেলাম। দীর্ঘদিন আমি সেখানেই অবস্থান করলেও কিছুদিন পর দ্বীন বাঁচাতে গিয়ে সেখান থেকে পলায়ন করে মদীনায় চলে আসি । মদীনা থাকাকালীন আমি অনেক সম্পদের মালিক হই এবং আমার পরিবারও হয়ে যায়। তবে আজকে আমি আমার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে মদিনা থেকে পলায়ন করে মক্কায় চলে যেতে হচ্ছে, যেমন আমি আমার দ্বীন বাঁচাতে গিয়ে মক্কা থেকে মদিনার দিকে পালিয়ে গিয়েছিলাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪০৩ ]
হযরত মুতাররিফ ইবেন শিখীর রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু দারদা রাযি. কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, ফেৎনার সম্মুখিন হওয়ার পূর্বে ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করতে পারা অনেক সৌভাগ্যজনক।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪০৭ ]
হযরত আবুল আলিয়া রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন সফওয়ান রাযিঃ একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন, তাদের পার্শ্বে হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন ওমর রাযিঃ অতিক্রম করলে তাকে ডেকে পাঠানো হয় । তিনি উভয়ের নিকট উপস্থিত হলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন সফওয়ান রাযিঃ বলেন, হে আব্দুর রহমান! আপনাকে আমীরুল মুমিনীন আব্দুল্লাহ ইবেন যুরাইবের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে কোন জিনিস বাধা প্রদান করছে, অথচ মক্কা, মদীনা, ইরাকের বাসিন্দা এবং শাম দেশের প্রায় সকলেই আমীরুল মুমিনীন মনে করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছেন। জবাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদের কথা মানতে পারিনা, যেহেতু তোমরা তোমাদের তলোয়ারকে কাঁধের উপর ধারন করতঃ মুসলমানদের রক্ত দ্বারা তোমাদের হাতকে রঞ্জিত করছ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪১২]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যারা অপরিচিত কোনো পতাকবাহীর অধীনে যুদ্ধ করে স্বজনপ্রীতি বশতঃ কারো প্রতি রাগ প্রদর্শন করে, উক্ত স্বজনপ্রীতির কারনে কাউকে সাহায্য করে আবার মানুষজনকে স্বজনপ্রীতির প্রতি দাওয়াত দেয়, অতঃপর সে যদি উক্ত যুদ্ধে মারা যায় তাহলে সে জাহেলী ভাবে মারা গেল । আর যে লোক আমার উম্মতের উপর অস্ত্র প্রদর্শন করে ভালো-খারাপ সবাইকে ভয় দেখায়, কোনো মুসলমানকে পরোয়া করেনা এবং কোনো জিম্মির প্রতি করা অঙ্গিকারকেও রক্ষা করে চলেনা। সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের দলভুক্ত নই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪১৩ ]
হযরত আব্দুল্লাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের মাঝে যেভাবে দাড়িয়েছি, একদা রাসূলুল্লাহ সাঃ সেভাবে আমাদের মাঝে দাড়িয়ে বললেন, কসম সেই সত্ত্বার, যার আমার হাতে প্রাণ! যারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আমি আল্লাহর রাসূল হওয়ার স্বাক্ষ্য দেয় তিনটি কারন পাওয়া যাওয়া ব্যতীত তাদের কাউকে হত্যা করা জায়েয হবেনা। একটি হচ্ছে, যদি তারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে কিসাস হিসেবে তাকে হত্যা করা বৈধ। দ্বিতীয়তঃ বিবাহিত কেউ যদি যিনা করে তাহলে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা জায়েয হয়ে যায়। তৃতীয়তঃ যারা ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় তাকে হত্যা করা বৈধ হয়ে যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪১৫]
হযরত কায়স ইবনে আবু হাজেম রহঃ হযরত সানাবিহী রাযিঃ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলে হাউজে কাওসারের পানি পান করার জন্য আমার কাছে আসবে এবং নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে নিয়ে গর্ব করব, সুতরাং তোমরা আমার পর পরস্পরে মারামারিতে লিপ্ত হয়োনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪১৬ ] [ মুসনাদে আহমাদঃ ১৮৬৬৭ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আল্লাহ তাআলার কাছে গোটা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিরাপরাধ কোনো মুসলমান নাহকভাবে হত্যা করার চাইতে অনেক সহজ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪১৮ ]
হযরত হুমাইদ ইবেন হেলাল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ফিতনাকালীন সময়ে হযরত সা'দকে বলা হলো, হে আবু ইসহাক! এসব ঝামেলাগুলো কি আপনি দেখছেননা, অথচ আপনি একজন বদরী সাহাবী এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আহলে শুরার জীবিত থাকা অন্যতম সদস্য। এ সম্বন্ধে আপনার অনুভূতি কি হতে পারে। জবাবে তিনি বললেন, খেলাফতের জিম্মাদারী গ্রহণ করার চেয়ে আমি আমার এই জামার প্রতি বেশি অধিকার সম্পন্ন। আমি আমার তলোয়ার দ্বারা যুদ্ধে লিপ্ত হবোনা যতক্ষণ না আমার সামনে স্পষ্ট হবেনা যে এই লোক মুসলমান এবং এই লোক কাফের। মুসলমান এবং কাফেরের মাঝে পার্থক্য করে এভাবে বলা হবেনা যে, এই লোক মুসলমান তুমি তাকে হত্যা করোনা এবং এই লোক কাফের তুমি তাকে হত্যা কর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪১৯ ]
হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ একদা কিয়ামতের পূর্বে এক ফেৎনা আলোচনা করেন, অতঃ তিনি বলেন, হে আবু মুসা! কসম সেই সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! আমরা সেই ফেৎনার সম্মুখিন হলে আমাদের এবং তোমাদের জন্য উক্ত ফেৎনা থেকে মুক্তির কোনো উপায় থাকবেনা। আমাদের নবী সাঃ এর ভাষ্যমতে যে ফেৎনার ভিতর প্রবেশ করলে বের হওয়া ব্যতীত অন্য কোনো উপায় থাকবেনা। তবে বের হতে হবে যেমনিভাবে প্রবেশ করা হয়েছে। অতঃপর উক্ত সম্বন্ধে কাউকে কিছুই বলা যাবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২০ ]
হযরত আবু হাসেম রাযিঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রাণপ্রিয় নাতী হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ এর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ পার্শ্বে দাফন করার ওসিয়্যত করেন, তবে যদি এব্যাপারে ঝগড়া ও মারামারি হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সাধারন মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করতে বলেন।
হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ মৃত্যু বরণ করলে মারওয়ান ইবনে হাকাম বনু ওমাইয়ার কাছে আসলেন। তারা পূর্ব থেকে অস্ত্রসজ্জিত অবস্থায় ছিল। অতঃপর মারওয়ান ইবনে হাকাম বলেন, হযরত উসমান এর উপর হামলাকারীকে আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে দাফন করতে দিবনা। আমরা এটাকে কঠোরভাবে বাধা দিব। অবশ্যই তারা দাফন করা নিয়ে যুদ্ধ করতে হয় কিনা, সে ব্যাপারে শঙ্কিত ছিল।
হাদীস বর্ণনাকারী আবু হাসেম বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ এরশাদ করেছেন, তোমাদের ধারনা কি,যদি মুসার সন্তান মৃত্যুর পূর্বে এমর্মে ওসীয়াত করে যে, তাকে যেন তার পিতার পার্শ্বে দাফন করা হয়, অতঃপর যদি তাকে ওসীয়্যতকৃত স্থানে দাফন করতে বাধা দেয়া হয় সেটা কি জুলুম হবেনা ? জবাবে আমি বললাম হ্যাঁ, অবশ্যই জুলুম হবে।
আবু হুরায়রা রাযিঃ বললেন, হাসান হচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সন্তান, তাকে বাধা দেয়া হচ্ছে, তার পিতার পার্শ্বে দাফন করার জন্য, এটা কি জুলুম হবেনা। অতঃপর হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ হোসাইন রাযিঃ এর কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বললেন এবং তাকে আল্লাহ্র নামে কসম দিয়ে বললেন, তোমার ভাই এমর্মে ওসিয়্যত করে গিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কবরের পার্শ্বে দাফন করতে গেলে যদি ঝগড়া ফাসাদের আশংকা হয় তাহলে যেন অন্য সাধারন মুসলমানদের সাথে দাফন করা হয়।
হযরত হোসাইন রাযিঃ কে বারবার বুঝানোর পর একসময় তিনি ব্যাপারটি মেনে নিলেন এবং হযরত হাসান রাযিঃকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। খালেদ ইবনে ওলীদ ইবনে ওক্বা রাযিঃ ব্যতীত বনু উমাইয়ার কেউ তার জানাযায় শরীক হয়নি। যেহেতু তিনি বনু উমাইয়ার লোকজনকে আল্লাহর নামে আত্মীয়তার কসম দেয়ার কারনে তাকে জানাযায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া হয়। ফলে খালেদ ইবনুল ওলীদ রাযিঃ হযরত হোসাইন রাযিঃ এর সাথে থেকে হযরত হাসান রাযিঃ এর দাফন- জানাযায় শরীক হয়েছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২১ ]
Comments 0