বনু উমাইয়ার বাদশাহি পতনের লক্ষন- কিতাবুল ফিতান
বনু উমাইয়ার বাদশাহি পতনের লক্ষন- কিতাবুল ফিতান
হযরত আবু তোফাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছেন, শাসন ক্ষমতা বনু উমাইয়ার হাতে বহাল থাকবে তাদের মধ্যে পরস্পর এখতেলাফ না হওয়া পর্যন্ত আর এখতেলাফ করলে ক্ষমতা আর বাকি থাকবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২০]
সাঈদ ইবনে সালেম আল-জায়শানী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাদের কাছে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পরস্পর যুদ্ধ লিপ্ত না হবে এবং একে অপরের সাথে মতবিরোধ না করবে। যখন তারা এমন কার্যকলাপে জড়িয়ে যাবে তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর কাফেরদের পক্ষ থেকে একটি দলকে চাপিয়ে দিবেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন শহরে হত্যা করতে থাকবে আর বিভিন্ন ভাবে গণনা করা হবে। আল্লাহর কসম! তারা এখতেলাফে জড়িয়ে পড়লে এক বৎসরে দুইজন এবং দুই বৎসরে চারজন বাদশাহ পরিবর্তন হয়ে যাবে। অর্থাৎ, পরস্পরের সাথে একতেলাফে জড়িত হলে এক বৎসরে দুই জন শাসক ক্ষমতাসীন হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২১ ]
হযরত উবাইদা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছেন, বনু উমাইয়ার হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরু দায়িত্ব থাকবে, যতক্ষণ না তারা পরস্পরের সাথে এখতেলাফে জড়িয়ে হয়ে পড়ে । আর যদি তারা এখতিলাফে জড়িত হয় তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাদের হাত থেকে চলে যাবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২২ ]
হযরত হাসান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো জাতির মধ্যে চারটি আচরণের যে কোনো একটি প্রকাশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুরুদায়িত্ব তাদের হাতে থাকবে। তার একটি হচ্ছে, আল্লাহ পাক তাদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করাবেন। দ্বিতীয়তঃ পূর্ব দিক থেকে কালো পতাকা বিশিষ্ট একদল সৈন্যের আত্মপ্রকাশ ঘটবে, যারা ক্ষমতাসীনদেরকে হত্যা করা বৈধ মনে করবে। আরেকটি হচ্ছে, যে শহরে যুদ্ধ বিগ্রহ হারাম সেখানে নিরপরাধ লোকদেরকে হত্যা করা হবে। যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সহযোগিতা করা ত্যাগ করবেন। চতুর্থতঃ যুদ্ধ বিগ্রহ হারাম করা হয়েছে এমন শহরে বিশাল এক বাহিনী পাঠানো হবে, এবং তারা সকলে একসাথে জমিনের ভিতর ধসে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২৩ ]
হিন্দ বিনতে মুহাল্লাব রহঃ থেকে বর্ণিত, হযরত ইকরামা রহঃ তাকে বলেছেন, তিনি হিন্দ বিনতে মুহাল্লাবের কাছে প্রায় সময় আসতেন এবং হাদীস বর্ণনা করে যেতেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণনা করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বনু উমাইয়ার লোকজন সামান্য বিষয় নিয়ে পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে। তবে এদের মধ্যে সামান্য মতপার্থক্য দেখা দিলে কিয়ামত পর্যন্ত তাদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হবে । পরবর্তীতে আর কখনো তারা ক্ষমতার মালিক হতে পারবে না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২৪ ]
কা'বের স্ত্রীর ছেলে তাবী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু উমাইয়া দীর্ঘ একশত বৎসর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন, মারওয়ানের সন্তানরা ক্ষমতায় ছিলেন ষাট বৎসর থেকে কিছু বেশি সময় । তারা নিজেরাই হাতছাড়া করা পর্যন্ত তাদের হাতেই ক্ষমতা বহাল ছিল। অনেকেই তাদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি। যখনই এক প্রান্ত থেকে আটকাতে চেয়েছে, তখনই আরেক প্রান্তে ধসে পড়বে। মীম দ্বারা তাদের বিজয় শুরু হবে এবং মীম দ্বারা সেটা শেষ হবে। তাদের কাছে রাজত্ব বাকি থাকবে, এক পর্যায়ে তাদের বংশে এক খলীফা বের হয়ে হত্যা করবে এবং তার বাহনকেও হত্যা করা হবে। তেমনিভাবে জামিরার ধূসর রংয়ের গাধাটিও হত্যা করা হয়। অতঃপর তাদের রাজত্ব খতম হয়ে যায় এবং মারওয়ানের হাতে বনুউমাইয়ার রাজত্ব এমনভাবে খতম হবে যেমন হাত-পায়ের নখকে পুরোপুরিভাবে কেটে ফেলা হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২৫ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক যুবক খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, যার কোনো ছেলে সন্তান ছিলনা। দিমাশ্বে বিদ্রোহের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হলে, পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ে মানুষের মাঝে দ্বন্দ দেখা দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২৬ ]
হযরত এরবায ইবনে মারিয়া রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শাম দেশে একজন খলীফাকে হত্যা করা হলে পরবর্তীতে অন্যায়ভাবে ভাবে হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে এবং আল্লাহ তাআলা পক্ষ থেকে নির্দেশ তথা কিয়ামত না হওয়া পর্যন্ত যে খলীফাই আসুক না কেন এভাবে নাজায়েয ও অবৈধ কাজ চলতেই থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২৭]
সাকাসিক গোত্রের জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যখন কুরাইশরা তাদের কোনো দায়িত্বশীলকে হত্যা করবে তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের দুশমনকে চাপিয়ে দিবেন। এমন কি তাদের বয়স্ক কিংবা আমীর সকলকে হত্যা করা হবে। তখন জাযিরার বাসিন্দাদেরকে সমূলে উৎখাত করা হবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫২৮ ]
আযহার ইবনুল ওলীদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মুদ্দারদাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আবুদ্দারদাকে বলতে শুনেছি, শাম এবং ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে যখন বনু উমাইয়ার জনৈক যুবক খলীফাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তখন থেকে খলীফার প্রতি আনুগত্য হালকা হতে থাকে এবং অন্যায়ভাবে জমিনের বুকে রক্তপাত হতে থাকবে। যুবক খলীফা হচ্ছেন, ওলীদ ইবনে ইয়াযীদ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩০]
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবু হাবীব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের উপর কোনো টেরা লোককে খলীফা নিযুক্ত করা হলে যদি তোমার শক্তি থাকে তাহলে মিশর ছেড়ে শাম দেশের দিকে চলে যাও। এটা অবশ্যই হিশাম খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পূর্বের ঘটনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩১]
সুফিয়ান আল-কালবী রহঃ বর্ণনা করেন, যখন ওলীদ ইবনে ইয়াযিদ নামক উমাইয়া বংশের কেউ খেলাফতের দায়িত্বগ্রহন করবে তখনই উমাইয়া খেলাফতের বিদায়ী ঘন্টা বেজে উঠবে। অতঃপর যখন ইবনে আব্দুল মালিক খলীফা হবেন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া মারা যায় তখন সুফিয়ান আল-কালবীকে বলা হলো, কৈ তোমার কথা তো ঠিক হয়নি। জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমার কথা বাস্তবায়ন হওয়ার জন্য ওলীদ ইয়াযিদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সুতরাং অতিসত্ত্বর সে খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩২ ]
হযরত খালেদ ইবনে আবু আমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফিয়ান আল-কালবী রহঃ এরশাদ করেন, বনু উমাইয়ার রাজত্বের পতন হবে তখন, যখন তাদের বংশের অল্প বয়স্ক এক যুবক খলীফা হবে এবিং তার আম্মাসহ তাকে হত্যা করা হবে মূলতঃ তখনই বনু উমাইয়ার শাসন ক্ষমতার বিদায়ী ঘন্টা বেজে উঠবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৩ ]
হযরত মুজাহিদ রহঃ তাবী রহঃ থেকে বর্ণনা করেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বনু উমাইয়ার হাতে বহাল থাকবে। এক পর্যায়ে এক লোকের ঔরশ থেকে চারজন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করবে। চারজন হচ্ছে, সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিক, হিশাম, ইয়াযিদ এবং ওলীদ ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৪ ]
ইবেন ওয়াহাব রহঃ থেকে বর্ণিত, একদিন হযরত মুয়াবিয়া রাযিঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রাযিঃ কে বললেন, তখন কি এক প্রয়োজনে মারওয়ান ইবনে হাকাম তার ঘরে এসে বের হয়ে গিয়েছেন। হযরত মুয়াবিয়া রাযিঃ তখন বলেন, আপনি কি জানেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যখন হাকামের সন্তান সংখ্যা চারশত নিরান্নব্বই জন পূর্ণ হবে তখনই তাদের ধ্বংস হওয়া খেজুর চিবিয়ে খতম করার ন্যায় শুরু হয়ে যাবে। জবাবে ইবেন আব্বাছ রাযিঃ বললেন, অবশ্যই জানি। এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৫]
হযরত কাসির ইবেন মুররা আল-হাজরামী রহঃ থেকে বর্ণিত, বনু উমাইয়ার শাসন ক্ষমতা পতন হওয়ার পর পৃথিবী আমার এই দুই জুতার মধ্যবর্তী স্থানের ন্যায় বিদ্যমান থাকা পছন্দ করিনা। অর্থাৎ, তখন পৃথিবী অশ্লীলতায় ভরপুর হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৬ ]
হযরত আবু উমাইয়া আল-কালবী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি ইয়াযিদ ইবেন আব্দুল মালিক এর খেলাফতকালীন এমন একজন শেখ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যিনি জাহেলী যুগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন । তিনি বলেন, হিশামের মৃত্যুর পর একজন যুবক খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করবেন।
যিনি প্রজাদেরকে এমনভাবে দান করবেন, যা ইতিপূর্বে কেউ করেনি। আহলে বাইতের একজন লোক (যার পরিচয় কোথাও উল্লেখ করা হয়নি) আত্মপ্রকাশ করে সে যুবক বাদশাহকে হত্যা করবে তার উভয় হাতে রক্ত প্রবাহিত করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তার হাত দ্বারা যাবতীয় সম্পদ বিনষ্ট হবে। এরপর জাযিরার দিক থেকে একলোক এসে তালোয়ারের সামনে জোরপূর্বক তার হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিবে । এরপর কালো ঝান্ডা বিশিষ্ট বিশাল এক বাহিনী তোমাদের উপর রক্ত বন্যা বয়ে দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৭ ]
ইবেন শিহাব যুহরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু উমাইয়া খলীফা মৃত্যুবরণ করার পর একজন যুবক খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তাকেও হত্যা করা হবে। অতঃপর জাযিরার পক্ষ থেকে একজনের আগমন হবে, সুলাইমান ইবনে হিশাম তখন জাযিরার অবস্থান করছিলেন। এরপরই কালো ঝান্ডা বিশিষ্ট লোকের আগমন ঘটবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৮ ]
হযরত নাযাল ইবেন সীরিন রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছেন, বনু উমাইয়ার শাসকদের উপর কঠিন কঠিন মসিবত আসতে থাকবে। এক পর্যায়ে তাদের প্রতি পঙ্গপালের ন্যায় বিশাল বাহিনী আসতে থাকবে। যারা কাউকে আমীর হিসেবেও মানবেনা আবার কারো অধীনস্ততাও স্বীকার করবেনা। এমন পরিস্থিতি দেখাদিলে আল্লাহ তাআলা বনু উমাইয়ার হাত থেকে রাজত্ব নিয়ে যাবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৩৯ ]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, শাম দেশে ব্যাপক এক ফেৎনা প্রকাশ পাবে, যার মধ্যে অনেক রক্তপাত হবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং ধনসম্পদ লুণ্ঠন করা হবে। এরপর পূর্বদিক থেকে বিশাল এক বাহিনী ধেয়ে আসবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৪০]
হযরত কা'ব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি এরশাদ করেন, হিশামের মৃত্যুবরণ করার পর কয়েক বৎসরের জন্য একজন লোক খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে, পরবর্তীতে আরেকজন লোক খলীফা হবে, যার হাতে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর তীমা নামক এলাকা থেকে আরেকজন লোক প্রকাশ পাবে, যার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে। ঐ লোক এবং তার সন্তানরা মিলে প্রায় পঞ্চশ বৎসর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫৪১]
হযরত তাবী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু উমাইয়্যার সর্বশেষ খলীফার শাসন আমল থাকবে মাত্র দুই বৎসর, বা তার চেয়েও কম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৪২ ]
আমাদের মাশায়েখদের কতিপয় গ্রহণ যোগ্য ব্যক্তি বর্ণনা করেন, ইয়াশু এবং কা'ব রহঃ একদিন একত্রিত হন। ইয়াশু ছিলেন, আলেম এবং কারী, যিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ নবী হওয়ার পূর্বের কিতাবাদি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তারা উভয়জন একে অন্যকে জিজ্ঞাস করতে গিয়ে ইয়াশু রহঃ হযরত কা'ব রহঃকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কি জানা আছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বিদায়ের পর রাজা-বাদশাহদের কি অবস্থা হবে।
জবাবে কা'ব রাঃ বলেন, আমি তাওরাতে পেয়েছি, প্রায় বার জন বাদশাহ হবেন, তাদের প্রথমজন হবেন সিদ্দীক, এরপর ফারুক, আল- আমীন, রা'সুল মুলুক, সাহেবুল আহরাছ, জাব্বার, সাহেবুল আ’সাব। তিনিই হবেন সর্বশেষ খীলফা এরপর হবেন সাহেবুল আলামাত । তিনিও মারা যাবেন। তবে যাবতীয় ফেৎনা প্রকাশ পাবে যখনই ইবনু মাহেক আয্ যাহীরিয়্যাতকে হত্যা করা হবে।
মূলতঃ তখন থেকে তাদের উপর বিভিন্ন ধরনের বালা মসীবত আসতে থাকবে এবং নম্রতা ও সহনশীলতা উঠিয়ে নেয়া হবে। এরপর সাহেবুল আলামতের পরিবার থেকে চারজন বাদশাহ হবে। তার মধ্যে দুইজন বাদশাহ হচ্ছেন তাদের জন্য কোনো কিতাব পাঠ করা হবেনা। আরেকজন বাদশাহ যিনি নিজের বিছানায় মৃত্যুবরণ করবে। তবে তার রাজত্বকাল হবে সামান্য সময়ের জন্য।
আরেকজন বাদশাহ, যিনি জওফের দিক থেকে আগমন করবে, তার হাতেই বিভিন্ন বালা-মসীবত সংঘটিত হবে। এবং মাধ্যমে সবকিছু সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। তিনি হিম্স এলাকায় একশত বিশদিন পর্যন্ত অবস্থান করবে, ঐসময় তার এলাকার পক্ষ থেকে আতংক ছড়িয়ে পড়বে। যার কারণে সকলে সেখান থেকে পলায়ন করবে এবং জওফ নামক এলাকায় বালা মসীবত দেখা দিবে। আবার তারাও পরস্পরের সাথে বালা মসীবতে লিপ্ত হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের রাজত্ব খতম হয়ে যাবে এবং অন্য গোত্রের লোকজন তাদের উপর বিজয়ী হয়ে শাসনক্ষমতা চালাতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৪৩ ]
আবু আমর আত্তাঈ রহঃ বলেন, মরওয়ান যখন হিমস নগরীকে অবরুদ্ধ করে রাখে তখন আমি সেখানে ছিলাম । উক্ত অবরোধ প্রায় চারমাস কিংবা সে পরিমান সময় পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। যার কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণা তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। সেখানে অবস্থানকারীদের জীবন সংকীর্ণ হয়ে উঠে। ফলে তারা সন্ধি করার প্রস্তাব দিয়ে পাঠায়।
এদিকে মরওয়ান শহরের বাহিরে বিশাল গর্ত খনন করার নির্দেশ দেয়। যখন সিমান্তের নিচে গর্ত করা হয় হুবহু শহরের ভিতরেও সেরকম গর্ত খনন করতে হিমস এলাকার আরেকদলকে নির্দেশ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তারা গলিমুখে স্বাক্ষাৎ করে। এদিকে হিমস বাসীদের একটি অংশ ছিল শহরের ভিতরে। যার কারণে মরওয়ানের লোকজন গর্ত করা আরম্ভ করলে শহরে অবস্থানকারীদেরকেও তার বরাবর গর্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
এভাবে উভয়দল গর্ত খনন করতে থাকে। এক পর্যায়ে উভয় দলের স্বাক্ষাৎ হয়ে যায়। কখনো কখনো গর্তের উপরের অংশ ধসে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে যায়। সেখানেই মরওয়ান তার বাহিনীকে কোথাও গর্ত করার নির্দেশ দিতেন হুবহু তার বরাবর হিমসের বাসিন্দারা গর্ত খনন করে নিত। অতঃপর শহরের মধ্যে অবস্থানকারী মরওয়ানের লোকজন মরওয়ানকে বলল, যখনই আমরা গর্ত করি সাথেসাথে তারাও গর্ত করা আরম্ভ করতে শুরু করে দেয়। ফলে তাদের এবং আমাদের মাঝে মোকাবেলা হয়। ফলে মরওয়ান তার বংশের লোককে ডেকে পাঠায় এবং তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে।
তবে নিবতী লোকটি তার কাছে যেতে অস্বীকার করে। যখন মরওয়ান তার বংশের লোকের সাথে চুক্তি করতে নিরাশ হয়ে যায় তখন বললেন, তাদের দিকে পানি প্রবাহিত হওয়ার যত পথ রয়েছে সবগুলো বন্ধ করে দাও । যখন হিমসবাসীরা মরওয়ানের সিদ্ধান্ত জানতে পারে তখন মরওয়ানের সৈন্যদের বিপরীত সিমান্তবর্তী এলাকায় একজন কালো লোককে নিযুক্ত করে। কিছুক্ষণপর তাদেরকে ডাক দিয়ে বলে, মরওয়ান! যদি তুমি পিপাষার্ত হও তাহলে আমরা তোমাকে পানি পান করাব। আর যদি ক্ষুদার্থ হও তাহলে তোমার খাবারের ব্যবস্থা করব, আর যদি তুমি চাও যে, আমরা তোমার সাথে এ আচরন করি তাহলে অবশ্যই আমরা সে আচরণই করব। তোমার সৈন্যদলকে তুমি কন্ট্রোল কর। তোমার প্রতি প্রবাহিত হওয়া পানি তোমাকে আর ডুবিয়ে মারবেনা।
অতঃপর শহরে এলান করে দেয়া হলো, শহরে অবস্থিত হারিছ নামক নদীটি যেন চালু করে দেয়া হয়, যেন শহরের বাহিরেও পানির প্রবাহ বাকি থাকে, তবে পানির গুরাতে দেখে শহর বাসীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যায়। আবার তার উপর বিভিন্ন কূপ থেকেও পানি ঢালা হয়, যেন সে পানি প্রবল স্রোতের সাথে মরওয়ানের সৈন্যবাহিনীর উপর আছড়ে পড়ে। যেই ভাবা সেই কাজ। স্রোতের সাথে উক্ত পানি মরওয়ানের সৈন্যবাহিনীর গায়ে গিয়ে পড়ে, তখন তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ছুটতে থাকে ।
হঠাৎ মরওয়ান বলে উঠল, এটা আবার কি? জবাবে সৈন্যরা বলল, হিমস নগরীর দিক থেকে তারা আপনার বিরুদ্ধে প্রবল স্রোতের সাথে পানি প্রবাহিত করেছে। অতঃপর মরওয়ান বলল, আমি তো ধারনা করেছিলাম হয়তো তারা অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছে, অথচ তাদের কাছে এত বেশি পানি মজুদ রয়েছে যা দ্বারা আমার সৈন্যবাহিনীকে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম। এরপর মরওয়ান তার সৈন্যকে অবরোধ তুলে নির্দেশ দিলে তারা অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫৪৪ ]
Comments 0