ফিতনাকালীন সময়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখাই উত্তম
ফিতনাকালীন সময়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখাই উত্তম
হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ফেনা সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। এরপর আবু মুসা আশআরী রাযিঃ বলেন, যদি আমরা ফেৎনার সম্মুখিন হই তাহলে যেমনভাবে ফেৎনার সম্মুখিন হয়েছি হুবহু সেভাবে বের হয়ে যাওয়া ছাড়া সেই ফেৎনা থেকে মুক্তির আর কোনো উপায় আমার জানা নেই। রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাদের কাছ থেকে এমন ওয়াদা নিয়েছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৪৯৭ ]
হযরত আবু মুসা আশআরী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে তোমাদের পরে ভয়াবহ ফেৎনা প্রকাশ পাবে। বসা অবস্থায় থাকা দাড়ানো থাকার চেয়ে উত্তম। দাড়ানো থাকা দৌড়ানো থেকে উত্তম, এভাবে সওয়ারীর কথাও উল্লেখ করেছেন। তোমরা এমন ফেৎনার সম্মুখিন হলে নিজেদের ঘরের সম্মুখভাগে অবস্থান কর।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৪৯৮ ]
হযরত জুনদুব রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর বিভিন্ন ধরনের ফেৎনা প্রকাশ পাবে তোমরা সেসময় নিজেদের মাটিতে থাকবে এবং ঘরের মাঝখানে অবস্থান করবে। কেননা উক্ত ফেৎনার ইচ্ছা করা ব্যতীত কাউকে সেটা গ্রাস করতে পারবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৯৯ ]
হযরত আবু হুরাইরা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, মানুষের জন্য এমন একটি সময় আসবে যখন তাকে অপারগতা এবং গুনাহের কাজের উপর এখতিয়ার দেয়া হবে। তোমাদের কেউ এমন ফেৎনার সম্মুখিন হলে সে যেন গুনাহের কাজ বর্জন করে অপারগতাকেই গ্রহন করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৫০০] [ মুসতাদরাকুল হাকেমঃ ৮৩৪৩ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের কাছে এমন এক সময় আসবে যখন উম্মতের মধ্যে মুমিনগনই হবে সবচেয়ে লাঞ্চিত লোক । চালাক হবে ঐলোক যে তার দ্বীন নিয়ে শিয়ালের ন্যায় ধুর্ততার সাথে সরে পড়ে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০১]
বিশিষ্ট সাহাবী কুরয আল খুজাঈ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, সেদিন সবচেয়ে উত্তম মানুষ হবে ঐ লোক যে লোকজনের সঙ্গ ত্যাগ করে পাহাড়ের উঁচু স্থানে চলে যায় এবং আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে তার ইবাদতে মগ্ন থাকে । অন্যদিকে লোকজনও তার অনিষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকে অর্থাৎ, সেও কারো ক্ষতি করেনা এবং কারো দ্বারা আক্রান্তও হয়না।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০২] [ সহিহ ইবনু হিব্বানঃ ৫৯৫৬ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অবশ্যই মানুষের কাছে এমন এক যুগ আসবে, যার থেকে কেউ নিরাপদ থাকবেনা, তবে যদি কেউ ডুবন্ত লোকের ন্যায় দোয়া করে তার মুক্তির আশা করা যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০৩]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফেতনাকালীন সর্বোত্তম লোক হবে, ঐ ব্যক্তি যে তার বকরীর পাল সহকারে পাহাড়ের উঁচু স্থান এবং ঘাঁস বিশিষ্ট এলাকায় অবস্থান করে। এবং নিকৃষ্টতম লোক হচ্ছে, যাত্রাবিরতী দাতা আরোহী এবং অনলবর্ষী বক্তা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০৫]
হযরত হোজাইফা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অনেক লোক ফেৎনাবাজ না হওয়া সত্ত্বেও যাবতীয় ফেৎনার সম্মুখীন হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০৬]
হযরত মুজাহিদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে ইসলাম খুবই অপরিচিত হিসেবেই প্রকাশ হয়েছিল অতিসত্ত্বর সেটা তার আপন অবস্থায় (অপরিচিত) ফিরে যাবে। কিয়ামতের পূর্বে যারা এমন অবস্থায় আকঁড়ে ধরে থাকবে তাদের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০৭] [ মুজামু আওসাত আত-তাবারিঃ ৫৮০৬ ]
হযরত আওন ইবেন আব্দুল্লাহ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক লোক হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ এর ফেৎনাকালীন মিসরে অবস্থান করে চিন্তিত অবস্থায় জমিনে আঘাত করছিলেন। তখন একলোক দাড়িয়ে বলেন, হে আবুদ্দুনিয়া! আপনি অন্তরে কোন বিষয়ে চিন্তা করছেন।
জবাবে তিনি বলেন, আমি চিন্তা করছি, আমার উপস্থিতিতে আজকে মানুষের উপর যে অবস্থা বিরাজ করছে সেটা নিয়ে। জবাবে তাকে বলা হলো, আপনার উন্নত ফিকরের কারনে আল্লাহ তাআলা আপনাকে উক্ত ফেৎনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্তি দিয়েছেন। অনেকে এমন রয়েছে যে মুক্তি চাওয়া সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। কিংবা নির্ভার থাকার পর যথেষ্ট হয়নি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০৮ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুবাইরা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি কেউ ফেৎনায় আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে তার একটি পা ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ এরপরও যদি তাকে বাধ্য করা হয় তাহলে অন্য আরেক পাও ভেঙ্গে ফেলতে হবে। উক্ত হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে ইবেন হিমইয়ার রহঃ ইবনে শুরাইহের নাম উল্লেখ করেননি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫০৯ ]
হযরত আলকামা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আহলে হক আহলে বাতেলের উপর জয়লাভ করে, তখন মনে করবে তুমি আপাতত কোনো ফেৎনার সম্মুখিন হবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১০ ]
হযরত আবু তাউস রহঃ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, ফেনাকালীন সর্বোত্তম লোক হচ্ছে, ঐ ব্যক্তি যে তার ঘোড়ার লাগাম আকঁড়ে ধরে শত্রুকে ভয়ে দেখায় এবং নিজেও দুশমনকে ভয় করে। অথবা ঐ ব্যক্তি যে লোকজনের সঙ্গ ত্যাগ করে আল্লাহ তা'আলার হক আদায় করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১১ ] [ সাহিহুল জামিঃ ৩২৯২ ]
হযরত ইবনে খায়সাম রাযিঃ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, ফেৎনা চলাকালীন ঐ লোক হচ্ছে, সর্বশ্রেষ্ঠ, যে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে গনীমত হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ দ্বারা নিজের জীবিকা নির্বাহ করে এবং ঐ লোক যে পাহাড়ের দূর্গম এলাকায় অবস্থান করে তার বকরীর আয়-রোজগার ও দুধ দ্বারা জীবন পরিচালনা করে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১২ ]
হযরত খালেদ ইবনে মা'দান স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, নেককার লোক ঐ ব্যক্তি যে যাবতীয় ফেৎনা থেকে বেঁচে থাকে। আর যে লোক ফেনায় আক্রান্ত হয়ে আন্তরিকভাবে ধৈর্য্য ধারন করে সে কতই ভাগ্যবান। আবার তার জন্য আফসোসও হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১৩ ]
বনু রবীয়াহ ইবনে কিলাব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, মানুষের জন্য এমন এক যুগ আসবে তখন কোনো পুরুষকে অপারগতা এবং অবৈধ কাজের ক্ষেত্রে এখতিয়ার দেয়া হবে। তোমাদের কেউ এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হলে সে যেন অবৈধ কাজকে গ্রহণ করার বিপরীত অপারগতাকে গ্রহণ করে। কেননা, অপারগতা অনেক উত্তম অবৈধ কাজ থেকে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১৪]
হযরত আওফ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে, হযরত আলী রাযিঃ এরশাদ করেছেন, এমন এক যুগ আসবে যে যুগে মুসলমানরাই হবে উম্মতের সব চেয়ে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিঃ বলেন, সেসময় মুসলমানরা শিয়ালের ধূর্ত অবস্থা পলায়নের ন্যায় পলায়ন করবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১৬ ]
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মানুষের জন্য এমন এক যুগ আসবে যে যুগে তাদের উত্তম বাসস্থান হবে গ্রাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১৭]
হযরত আবু কুবাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ তার মায়ের কাছে খবর পাঠিয়েছেন যে, লোকজন আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং তারা আমাকে নিরাপত্তার দিকে আহবান জানাচ্ছে এসম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি হতে পারে? জবাবে তার আম্মা বলে পাঠালেন, যদি তুমি কিতাবুল্লাহ এবং আল্লাহর নবীর সুন্নাতকে হেফাজত করার জন্য বের হয়ে থাকো এবং এর জন্য মারাও যাও তাহলে তুমি হক্বের উপর মৃত্যু বরণ করবে। আর যদি তুমি দুনিয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাকো তাহলে তোমার জীবিত থাকা এবং মারা যাওয়ার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১৮ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের ফেতনা মূল ফেৎনার অংশসমূহের একটি অংশ। এখনো সে ফেতনা গুলো ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ হতে চলছে। উক্ত ফেৎনার প্রতি কেউ সামান্য ধাবিত হলে ফেৎনাও তার প্রতি এগিয়ে আসবে আর কেউ ফেৎনার দিকে ঢেউযোগে এগিয়ে গেলে ফেৎনাও তার দিকে ঢেউয়ের মত ধেয়ে আসবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৫১৯ ]
Comments 0