ফিতনাকালীন সময়ে আত্মরক্ষাই শ্রেয়-৩য় পর্ব
ফিতনাকালীন সময়ে আত্মরক্ষাই শ্রেয়-৩য় পর্ব
হযরত সুফিয়ান ইবনে লাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত হাসান ইবনে আলী রাযিঃ খেলাফত ত্যাগ করে কুফা থেকে মদীনায় ফিরে আসলে আমি তার কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে মুসলমানদেরকে লাঞ্ছনাকারী! আমার কথা শুনে তিনি বলে উঠলেন, আমি হযরত আলী রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, কিয়ামত সংঘটিত হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত খেলাফতের দায়িত্ব এমন এক লোকের হাতে আসবেনা, যে হবে কর্তিত নাকওয়ালা, অধিক আহারকারী, বেশি ভক্ষণ করলেও তৃপ্ত হয়না, সেই হচ্ছে, মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান।
অতঃপর আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, নিঃসন্দেহে এটি হবেই, আমি শংকিত ছিলাম,তার এবং আমার মাঝে যুদ্ধ ও মারামারি হওয়া নিয়ে। আল্লাহর কসম! এই হাদীস শুনার পর থেকে দুনিয়ার কোনো কিছুই আমাকে খুশি করতে পারেনি। উক্ত পৃথিবীতে চন্দ্র-সূৰ্য্য উদিত হবে এবং আমি জুলুমের মাধ্যমে কোনো মুসলমানের রক্তে রঞ্জিত হয়ে আল্লাহর সাথে স্বাক্ষাৎ করব, এটা হতে পারেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২২ ]
হযরত হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ হাসান ইবনে আলীর প্রতি ইঙ্গিত করে এরশাদ করেছেন,আমার এই সন্তান একদিন সায়্যিদ হবে এবং আল্লাহ তাআলা অতিসত্ত্বর তার হাতের মাধ্যমে মুসলমানদের বিশাল বড় দুই দলের মাঝে এসলাহ করাবেন,যদ্বারা মুসলমানরা বড় ধরনের এক এক যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়া থেকে রক্ষা পাবেন ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২৩ ] [ মুসনাদে আহমাদঃ ৪০৪৬ ]
হযরত যুহরী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হযরত আলী রাযিঃ এর সাথে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাযিঃ এর স্বাক্ষাৎ হয় কিংবা উসামা রাযিঃ কে হযরত আলী রাযিঃ ডেকে পাঠালেন। আলী রাযিঃ বললেন, হে উসামা! আমরা তোমাকে আমাদের একজন মনে করি। সুতরাং তুমি আমাদের এই জিম্মাদারীর অংশিদারী কেন হওনা? জবাবে হযরত ওসামা ইবনে যায়েদ বললেন, হে আবুল হাসান! আল্লাহর কসম, নিঃসন্দেহে আপনি যদি কোনো মারাত্মক সংকটের মোকাবেলা করেন,অবশ্যই আমি ও আরেকটির সমাধানের চেষ্টা করব, ধ্বংস হলে একসাথে হবো, জীবিত থাকলে একসাথে জীবিত থাকব। তবে আপনি যে দায়িত্বে আছেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো তার মধ্যে শরীক হবোনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২৪ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তাকে একদা কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ কিংবা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ থেকে কারো পক্ষাবলম্বন করছেননা কেন? জবাবে তাকে ইবনে ওমর রাযিঃ বলেন, উভয় দল থেকে যার পক্ষে আমি যুদ্ধ করিনা কেন, নিঃসন্দেহে আমি মারা গেলে কিংবা হত্যা হলে প্রজ্বলিত আগুনে নিক্ষিপ্ত হব।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২৫ ]
হযরত কুবাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযিঃ সর্বদা বলতেন, তোমরা এই শেখের বিরোধীতা করা থেকে বিরত থাক, ওসমান রাযিঃ এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়োনা, কেননা তার কারনে এখনো কোমলতা টিকে আছে । আল্লাহর কসম! যদি তোমরা তাকে হত্যা করো, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তার তলোয়ার এমনভাবে খাপমুক্ত করবেন, আর কখনো সেটা খাপবদ্ধ হবেনা। যা কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২৬ ]
হযরত মায়মুন ইবেন মেহরান রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী রাযিঃ বলেছেন, আমি কখনো এ কথার উপর আনন্দিত হতে পারিনা যে, আমি হযরত ওসমান রাযিঃ এর হত্যাকারী সত্তর জনের একজন হবো, অথচ আমার জন্য দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় সবকিছু বিদ্যমান থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২৮ ] [ তারিখুল মাদিনাঃ ২১১৬ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, আমি হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর কসম! আমি ওসমানকে হত্যা করিনি এবং হত্যা করার নির্দেশও দিইনি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪২৯ ]
হযরত ইবনে তাউস রহঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, যখন ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করার ফিৎনা মারাত্মক আকার ধারন করে তখন এক লোক তার পরিবারের লোকজনকে বলতে লাগল, তোমরা আমাকে লোহার শিকল দ্বারা বেধে ফেল, আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। এরপর ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করা হলে সে পুনরায় বলল, আমাকে এখন ছেড়ে দিতে পার। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি আমাকে পাগলামী থেকে সুস্থ করেছেন এবং ওসমান রাযিঃ এর হত্যাকান্ডে শরীক হওয়া থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩০ ] [ হিলইয়াতুল আউলিয়াঃ ৫৯৬ ]
হযরত ইবনে আবি বক রাঃ স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, খবরদার! তোমরা আমার পর পথভ্রষ্ট হয়ে যেওনা। যে, পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তোমরা পরস্পর একে অন্যের গর্দান কাটতে থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩১] [ সহিহুল বুখারিঃ ১১৯ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবেন সীরিন রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সংবাদ প্রাপ্ত হয়েছি, নিশ্চয় হযরত সা'দ রাযিঃ বলতেন, যখন থেকে আমি যেহাদ সম্বন্ধে বুঝতে আরম্ভ করি তখন থেকে আমি জেহাদ করতে থাকি। তবে এখন আমি আর যুদ্ধ করবোনা, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে দুই চোখ, দুই ঠোঁট ও একটি মুখ বিশিষ্ট তলোয়ার এনে দিবেনা, যে তলোয়ার আমাকে চিহ্নিত করে দিবে, কে মুসলমান এবং কে কাফের।
[ আল ফিতান নুয়াইম বিন হাম্মাদ ৪৩২] [ তাবাকাতুল কুবরাঃ ৩১২০ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের উপর তলোয়ার উঠাবে বা অস্ত্র প্রয়োগ করবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয় । বর্ণনাকারী হযরত আবু মুআবিয়া রহঃ বলেন, যারা আমাদের উপর হাতিয়ার দ্বারা হামলা করবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৩ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ হতে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযিঃ এর ফেৎনা চলাকালীন তার কাছে দুইজন লোক এসে বলল, লোকজন কি করছে আপনিতো ভালো করে উপলব্ধি করছেন, অথচ, আপনি খাত্তাবের পুত্র ওমরের সন্তান এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবীদের একজন। আপনাকে বের হতে কে নিষেধ করেছে? জবাবে তিনি বললেন, আমাকে বাধা দিচ্ছে,নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা আমার উপর কোনো মুসলমানকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন।
তার কথা শুনে আগত দুইজন বললেন, আল্লাহ তা'আলা কি একথা বলেননি, “তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ না ফেতনা পুরোপুরি মূলৎপাটন হবে এবং দ্বীন পরিপূর্ণ আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে। (সুরা বাকারা -১৯৩)। জবাবে হযরত ইবনে ওমর রাযিঃ বললেন, হ্যাঁ, ফেৎনা দুর হওয়া এবং দ্বীন পরিপূর্ণ আল্লাহর জন্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ করেছি, অথচ তোমরা বর্তমানে এমন এক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করছ যা দ্বারা ফেৎনা আরো ব্যাপক আকার ধারন করবে এবং দ্বীন হয়ে যাবে গায়রুল্লাহর জন্য।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৪ ] [ সহিহুল বুখারিঃ ৪১৮০]
হযরত আবু যর গিফারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বলেছেন, হে আবু যর! যদি লোকজন যুদ্ধ করতে করতে এত বেশি রক্তপাত করবে যদ্বারা মদীনার পার্শ্বে অবস্থিত পাথরগুলো রক্তের মধ্যে ডুবে যাবে তখন তুমি কি করবে, জবাবে আমি স্বভাবসূলভ বললাম, এব্যাপারে আল্লাহ এবং তার রসূলই ভালো জানেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ জবাবে বললেন, তুমি তোমার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে থাকবে।
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কথা শুনে আমি বললাম, সে রক্তপাত যদি আমার উপর এসে পড়ে তাহলে কি করব, জবাবে তিনি বললেন, এমন অবস্থা হলে তুমি তোমার মূল গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কথা শুনে আমি বললাম, ঐ সময় যদি আমি অস্ত্রধারন করি তাহলে কেমন হবে। জবাবে তিনি বললেন,তাহলে কিন্তু তুমিও তাদের শরীক হয়ে যাবে।
এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে আমার করণীয় কি হওয়া উচিৎ? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, যদি অস্ত্রের আঘাত তোমার উপর এসে পড়ার আশঙ্কা করো তাহলে তোমার চাদরের একটি অংশ দ্বারা তোমার চেহারাকে ঢেকে রাখবে, তোমার উপর আক্রমণকারী তার গুনাহ এবং তোমার গুনাহ সহকারে ফেরৎ যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৫ ] [ সহিহ ইবনু হিব্বানঃ ৬০৮৬ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমের ইবনে রবীয়াহ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ তাকে অবরুদ্ধ করা অবস্থায় বলেন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে বড় কল্যাণকামী যে তার হাত এবং অস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৬ ]
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ অবরুদ্ধ হওয়ার দিন তার ঘরে প্রবেশ করে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি আনন্দিত নাকি চিন্তিত? জবাবে তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি কি খুশি হবে যে, আমি সকল মানুষকে হত্যা করি এবং তাদের সাথে আমাকেও। আমি বললাম, না এখানে তো খুশি হওয়ার কিছুই নেই ।
আমার কথা শুনে তিনি সহসা বলে উঠলেন, আল্লাহর কসম! যদি আমি একজন লোককেও হত্যা করি তাহলে যেন আমি সকল মানুষকে হত্যা করলাম। আবু হুরায়রা রাযিঃ বললেন, অতঃপর আমি ফিরে আসলাম এবং বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করার চিন্তা ত্যাগ করলাম। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আবু সালেহ রহঃ বলেন, হযরত ওসমান রাযিঃ কে যেদিন শহীদ করা হয় সেদিন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাযিঃ বারবার বলে বেড়িয়েছেন, আল্লাহর কসম! তোমরা অযথা রক্তপাত করোনা, কেননা এর মাধ্যমে তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৭ ]
হযরত জাবের ইবেন আব্দুল্লাহ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় তোমাদের খুন, সম্পদ তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম, যেমন তোমাদের এই শহরে এই মর্মে, এই দিনে সবকিছু হারাম।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৮ ] [ সহিহ মুসলিমঃ ২১৪৫ ]
হযরত ইব্রাহীম রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, একজন লোক দ্বীনের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করে, যতক্ষণ না সে, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে, যদি কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তাহলে তার কাছ থেকে লজ্জা ইত্যাদি ছিনিয়ে নেয়া হয়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৩৯ ]
হযরত ইয়াহইয়া রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমেরকে বলতে শুনেছি, উসমান রাযিঃ অবরুদ্ধ হওয়ার দিন আমি তার সাথে ছিলাম, তিনি ঐসময় বলতেছিলেন,যারা আমার কথা মেনে চলে এবং আনুগত্য করে তাদের ক্ষেত্রে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে যে, তারা নিজের হাত এবং অস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কেননা ঐলোক আমার সবচাইতে বেশি কল্যাণকামী যে নিজের অস্ত্র ও হাতকে কন্ট্রোল করে।
অতঃপর তিনি বললেন, হে ইবনে ওমর! তুমি দাড়াও এবং মানুষের মাঝে সেটা ঘোষণা করে দাও। এরপর সেখান থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর উঠে দাড়ালেন। অতঃপর তার গোত্রের কতক লোক, যারা বনুআদী, বনুসুরাকা ও বনু মুতী থেকে ছিলেন তারা দাড়িয়ে বের হওয়ার জন্য দরজা খুললে বিদ্রোহীরা একযুগে ভিতরে ঢুকে পড়ে হযরত ওসমান রাযিঃকে হত্যা করে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমের বলেন, একদিন আমের ইবনে রবীয়াহ রাত্রে নামায আদায় করতে দাড়িয়ে গেলেন, এদিকে লোকজন হযরত ওসমান রাযিঃ এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশৃংখলায় ব্যস্ত। রাত্রে নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে দেখলেন যে, তাকে বলা হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে তোমাকে ফেৎনা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য দোয়া করতে থাক, যে ফেৎনা থেকে আল্লাহ তাআলা তার নেক্কার বান্দাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। অতঃপর ঘুম থেকে নামাযে দাড়িয়ে গেলেন, এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরবর্তীতে জানাযার আগে আর বের হলেননা ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪১ ]
হযরত যুনদুব গিফারী রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতিসত্ত্বর মারাত্মক ফেৎনার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তার কথা শুনে আমরা বললাম, হে আবু আব্দুল্লাহ! এমন ফেৎনাকালীন আমাদের প্রতি আপনার কি নির্দেশনা রয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, জমীন-জমীন, যেন তোমরা সকলে ঘরের ভিতরে অবস্থান কর। কেননা, উক্ত ফেৎনার প্রতি ধাবিত হওয়া ছাড়া সেটা কারো প্রতি প্রবাহিত হবেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি এরশাদ করেন, যখন হযরত আলী রাযিঃ কে শহীদ করে দেয়া হলো এবং হযরত হাসান রাযিঃ লোকজনকে বাইয়াত করেছিলেন তখন যিয়াদ এসে আমাকে বলেন, তোমাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকার ব্যাপারে কি তুমি সন্তুষ্ট। জবাবে আমি হ্যাঁ বললে তিনি বললেন, তাহলে অমুক, অমুক অমুককে হত্যা করতে হবে। তার কথা শুনে আমি বললাম তারাকি ফজরের নামায আদায় করেন নি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তখন আমি বললাম তাহলেতো সেটা করা যাবেনা, আল্লাহর কসম! একাজটি কখনো হতে পারেনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪৩ ]
হযরত আব্দুর রহমান ইবেন আবু লাইলা রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রাযিঃ কে অমুক গোত্রের পার্শ্বে অবস্থিত পাহাড়ের পার্শ্ব দিয়ে হাত উত্তোলন করা অবস্থায় দেখেছি। তিনি বলতেছিলেন, হে আল্লাহ! হযরত ওসমান রাযিঃ রক্ত থেকে আমি নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪৫ ]
হযরত যায়েদ ইবেন ওয়াহাব রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, এই মসৃণ এলাকায় মুসলমানাদের দুইটি দল ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হবে, তাদের উভয় দলের যারা মারা যাবে তাদের মৃত্যু হবে জাহেলী যুগের মৃত্যুর ন্যায়।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪৬ ]
হযরত ইবনুল হানাফিয়্যাহ এবং আব্দুল্লাহ্ ইবেন আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তারা উভয়জন বলেন, হযরত আলী রাযিঃ কে বলা হলো, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযিঃ ওসমান রাযিঃ এর হত্যকারীদেরকে অভিশাপ দিচ্ছেন। একথা শুনার সাথে সাথে হযরত আলী রাযিঃ তার উভয় হাতকে উপরের দিকে উত্তোলন করতে করতে চেহারা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে বললেন, আমি নিজেও হযরত ওসমান রাযিঃ এ হত্যাকারীদেরকে লানত করছি। আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে পাহাড়ে, পর্বতে, সমতল ভূমিসহ সর্বস্তরে লা'নত করছেন। কথাটি তিনি দুইবার কিং বা তিনবার বলেছেন । একথা বর্ণনা করে ইবনুল হানাফিয়্যাহ রহঃ আমাদের দিকে তাকায়ে বললেন, তবে এক্ষেত্রে ইনসাফপূর্ণ স্বাক্ষী হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রযিঃ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪৮ ]
হযরত আবু কাবশা সাদুসী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুসা আশতারী রাযিঃ কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় তোমাদের দিকে অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ভয়াবহ এক ফেৎনা ধেয়ে আসছে। তখন কোনো মানুষ সকালে মুমিন থাকলেও সন্ধ্যাবেলা কাফের হয়ে যাবে এবং সন্ধ্যায় মুমিন হিসেবে দৃঢ় থাকা সত্ত্বেও পরের দিন সকাল হতে হতে কাফের হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
তখন বসা অবস্থায় থাকা দাড়ানো থেকে উত্তম, এবং দাড়িয়ে থাকা সামনে অগ্রসর হওয়া থেকে উত্তম । সামনের দিকে পায়দল চলা বাহনের উপর সওয়ার হয়ে চলা থেকে উত্তম । একথা শুনে উপস্থিত সকলে বলল, তাহলে আমাদের প্রতি আপনার কি দিক নির্দেশনা রয়েছে, জবাবে তিনি বললেন, এমন ভয়াবহ ফেৎনার আত্মপ্রকাশ হলে তোমরা ঘরের মধ্যে অবস্থানকারী হয়ে যাও।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৪৯ ] [ মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাঃ ৩৬৪৩২ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত ওসমান রাযিঃ কে হত্যা করার দিন বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! যদি তোমরা হত্যা করো তাহলে তোমাদের জন্য একসাথে নামায আদায় করা, একসাথে হজ্ব করা এবং একসাথে যুদ্ধ করা ঠিক হবেনা। যদি করে তাহলে তোমরা শারীরিকভাবে এক হলেও কিন্তু আন্তরিকভাবে মতপার্থক্যপূর্ণ থাকবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৫০ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আবুল হুজাইল রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত খাব্বাব ইবনুল আরাত রাযিঃ যেদিন লোকজন হযরত ওসমান রাযিঃ এর ব্যাপার নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে যায় তখন তার ছেলেকে বললেন, যেন তারা নিকৃষ্টতম একটি ফেৎনার সামনে দাড়িয়ে। তোমরা যদি উক্ত ফেৎনার সম্মুখিন হও তাহলে হযরত আদম আঃ এর দুই সন্তানদের উত্তম সন্তানের ন্যায় হয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৫১ ]
হযরত ইবনে আবু বকরা তার পিতা আবু বকরা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে রিওয়ায়েত করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, খবরদার! তোমরা আমার পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়োনা। নিশ্চয় একথাটি তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছ তারা অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দিবে । খবরদার! নিঃসন্দেহে তোমাদের খুন, তোমাদের সম্পদ, এবং তোমাদের ইজ্জত-সম্মান তোমাদের উপর এমনভাবে হারাম যেমন হারাম এই মাসে, এই শহরে এই দিনে কোনো রক্তপাত করা। আল্লাহ তাআলার সাথে তোমাদের স্বাক্ষাৎ হলে তোমাদের আমল সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হবে। খবরদার! তোমরা কেউ আমার পর পথভ্রষ্ট হবেনা, যার কারণে তোমরা পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যেওনা। নিঃসন্দেহে, তোমরা যারা উপস্থিত রয়েছো তারা অবশ্যই অনুপস্থিতদের কাছে আমার কথাটি পৌঁছে দিবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৫৩] [ সহিহুল বুখারিঃ ৪০৮১ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, অতিসত্ত্বর আত্মপ্রকাশকারী খারাপির ফলে গোটা আরব ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে যেলোক তার হাতকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেই সফলকাম হয়ে যাবে ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৫৫ ] [ সুনানে আবু দাউদঃ ৩৭১১ ]
হযরত মুহাম্মদ ইবনে সীরিন রহঃ বলেন, বিশিষ্ট সাহাবী যায়েদ বিন সাবেত রাযিঃ হযরত ওসমান রাযিঃ এর ঘরে প্রবেশ করে বললেন, আনসারগন আপনার ঘরের দরজায় উপস্থিত, তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আপনি চাইলে তারা সকলে আনসারুল্লাহ হয়ে যাবে। একথাটি ওসমান রাযিঃ এর সামনে প্রায় দুইবার বলা হলে জবাবে তিনি বললেন, তোমরা যদি যুদ্ধ করার অনুমতি চাও তাহলে কিন্তু আমি তার অনুমতি দিবনা।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৫৬]
হযরত কা'ব ইবেন মুররা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাঃ সমসাময়িক ফেত্না সম্বন্ধে আলোচনা করতেছিলেন। তখন চাদর দ্বারা মাথাআবৃত একলোক দিনদুপুরে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, এই লোকটি সেদিন হেদায়েতের উপর থাকবে।
বর্ণনাকারী বলেন, একথাটি শুনেই আমি দাড়িয়ে লোকটির পিছু নিলাম, তার কাঁধের উপর হাত রেখে তার চেহারা থেকে চাদর সরিয়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ দিকে তাকে মুখোমুখি করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই লোক? জবাবে রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি লোকটিকে দেখলাম, লোকটি হলেন, হযরত ওসমান ইবনে আফফান রাযিঃ ।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৬১ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনে রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে বর্ণনা করেন, যদি কেউ কাউকে জুলুমের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে হত্যা করে তাহলে তার গুনাহের একটি অংশ হযরত আদম আঃ এর প্রথম ছেলের সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। যেহেতু তার মাধ্যমেই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৬২ ]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন মাসউদ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম হত্যাকান্ড সম্বন্ধে ফায়শালা হবে। সেদিন একজন লোক আরেকজন লোকের হাত ধরে আল্লাহ তাআলার দরবারে উপস্থিত করে বলবে, হে আল্লাহ! এই লোকটি আমাকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাআলা ঐ লোককে বলবে, তুমি তাকে কেন হত্যা করেছ, জবাবে সে বলবে, ইয়া রব! অমুক লোকের সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য আমি তাকে হত্যা করেছি।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, নিঃসন্দেহে তুমি তোমার আমলকে বরবাদ করে দিয়েছ। তেমনিভাবে অন্য আরেকজন লোক আরেকজনকে পাকড়াও করে বলবে, হে আল্লাহ! এই লোকটি আমাকে হত্যা করেছে। তাকে দেখে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি তাকে কেন হত্যা করেছ? সে জবাবে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আপনার সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য মূলতঃ তাকে হত্যা করেছি। জবাবে আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার সম্মানতো আগে থেকে বৃদ্ধি হয়ে আছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৬৪ ]
হযরত আবু বকরা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, উল্লেখযোগ্য কারন ছাড়া যদি কেউ কোনো নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে এমন লোককে হত্যা করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার উপর জান্নাতকে হারাম করে দিবেন।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৬৬ ] [ সুনানে আবু দাউদঃ ২৩৮৩ ]
হযরত আবু হুরায়রা রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, অতি সন্নিকটে ধাবমান ফেৎনায় আক্রান্ত হয়ে আরবরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যে ফেৎনা হবে অন্ধ, বধীর এবং বোবাদের ন্যায়। যার থেকে পরিত্রানের কোনো উপায় থাকবেনা। উক্ত ফেৎনাকালীন যারা বসে থাকবে তারা দন্ডায়মান লোকের তুলনায় অনেক উত্তম হবে, দাড়ানো অবস্থায় থাকা লোকজন চলমান লোকের চাইতে উত্তম হবে, স্বাভাবিকভাবে যারা চলাফেরা করে তার দৌড়ে ফেৎনার প্রতি ধাবিত হওয়া লোকের তুলনায় অনেক ভালো হবে। সুতরাং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে নিকৃষ্টতম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে, যারা এধরনের ফেৎনার প্রতি দৌড় দিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৬৭ ]
হযরত উমায়র ইবেন হানী রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন ওমর রাযিঃ বারবার বলতে শুনেছি, আব্দুল্লাহ ইবেন যুবায়ের, নাজদা এবং হাজ্জাজ সকলে জাহান্নামের আগুনে এমনভাবে ঝাপিয়ে পড়বে, যেমন খাবারের বস্তুতে মাছি এসে ঝাপিয়ে পড়ে, তবে কেউ ঘোষকের ঘোষণা শুনার সাথে সাথে সেদিকে দৌড় দিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৬৯ ]
হযরত আবুল হোসাইন রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা'বার পার্শ্বে, হাজরে আসওদের নিকটে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযিঃ কে সেজদারত অবস্থায় দেখেছি, তিনি বলতেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি এমন ফেৎনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যা কুরাইশের দিকে ধেয়ে আসছে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৭০ ]
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাছ রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন হযরত আলী রাযিঃ কে শহীদ করা হয় এবং লোকজন হযরত হাসান রাযিঃ এর হাতে বাইয়াত গ্রহন করছিল তখন যিয়াদ হযরত ইবনে আব্বাছ রাযিঃ এর কাছে এসে বললেন, তোমাদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সর্বদা থাকবে একথাটি কি আপনারা কামনা করেন। জবাবে ইবনে আব্বাছ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই।
একথা শুনে যিয়াদ বলে উঠলো, যদি তোমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে চাও তাহলে অমুক, অমুককে হত্যা করতে হবে। একথা শুনে হযরত ইবেন আব্বাছ রাযিঃ বললেন, তারা কি আজকে ফজরের নামায আদায় করেছিল, রিয়াদ জবাব দিল, হ্যাঁ তারাতো ফজরের নামায আদায় করেছে। তখন আব্দুল্লাহ ইবেন আব্বাছ বললেন, তাহলে তাদেরকে অযথা হত্যা করার প্রশ্নই আসেনা, যেহেতু আমি তাদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিরাপত্ত্বার মধ্যে রয়েছে বলে দেখছি।
পরবর্তীতে যখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবেন আব্বাছ রাযিঃ যিয়াদের ভুমিকা সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি সহসা বলে উঠলেন, এ ভূমিকা তো সেটারই অংশ যা তার সিদ্ধান্ত ছিল এবং আমাকেও সেটার প্রতি ইঙ্গিত করেছিল।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৭১ ]
হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান রাযিঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা যাবতীয় ফেৎনা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখ, প্রথমতঃ উক্ত ফেৎনাকে কেউ চিহ্নিত করতে পারবেনা। আল্লাহর কসম! কেউ উক্ত ফেৎনার সম্মুখিন হলে তাকে এমনভাবে ধ্বংস করবে, যেমন পাহাড়ী ঢেউ সবকিছুকে ধ্বংস করে নিয়ে যায়। উক্ত ফেৎনা প্রথম খুবই সুন্দরভাবে প্রকাশ পাবে, ফলে মূর্খপ্রকৃতির লোকজন মনে করবে, বাহ! এটা তো দেখি খুবই সুন্দর, তবে যাওয়ার সময় সবকিছু ধুলিস্যাৎ করে নিয়ে যাবে।
[ আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪৭২]
Comments 0